রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে প্রাণ ভিক্ষা পাওয়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তাহেরের বড় ছেলে এ এইচ এম আফতাব উদ্দিন বিপ্লবের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার জেলার তেওয়ারীগঞ্জ বাজারে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের প্রচারণা চালাতে গিয়ে নিজেকে ‘খারাপ মানুষ’ হিসেবে অভিহিত করেন বিপ্লব। প্রায় ১১ মিনিটের বক্তব্যর একপর্যায়ে ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেউ ভয় পাবেন না। ধৈর্য ধরেন। আমার চেয়ে খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না।’
বিপ্লবের এমন বক্তব্য নিয়ে লক্ষ্মীপুরে বেশ আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বিপ্লবকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেন। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান তাঁর সাজা মওকুফ করেন। পরের বছর আরও দুটি হত্যা মামলায় (কামাল ও মহসিন হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন রাষ্ট্রপতি। পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে ফিরোজ হত্যা মামলা থেকেও বিপ্লবের নাম প্রত্যাহার করা হয়।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ওমর ফারুক ইবনে হুছাইনের পক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নতুন তেওয়ারীগঞ্জ বাজারে গণসংযোগ করেন বিপ্লব। প্রার্থী ফারুক ইবনে হুছাইন বিপ্লবের ভগ্নিপতি।
বিপ্লব তাঁর বক্তব্যটি নিজের ফেসবুক পেজেও শেয়ার করেন। প্রায় ১১ মিনিটের ভিডিওতে বক্তব্যের একপর্যায়ে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘কেউ ভয় পাবেন না। আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না। ভোটের দিন পর্যন্ত আমি তেওয়ারীগঞ্জে থাকব। আমি দেখব কে কত বড় সন্ত্রাসী হয়েছেন।’
ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরী বলেন, ‘বিপ্লব ওই এলাকার ভোটার নন, তিনি বহিরাগত। তাঁর এমন উসকানিমূলক বক্তব্যে ভোটের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। বিষয়টি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তাঁর ওপর হামলার অভিযোগও সঠিক নয়।’
তবে এ এইচ এম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব বলেন, ‘দলীয় নেতা ভুলুর নির্বাচনী গণসংযোগের জন্য ওই এলাকায় যাই। আমাদের শান্তিপূর্ণ গণসংযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। আমার গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। এতে আমি রাগে ও দুঃখে এ ধরনের কথা বলছি। তবে আমরা চাই ভোট শান্তির পূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হোক।’
জানতে চাইলে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক বলেন, ‘বিষয়টি আমি কয়েকজনের কাছে শুনেছি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এই নিয়ে কোনো অভিযোগ দেননি। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নে আটজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৮ এপ্রিল তেওয়ারীগঞ্জসহ সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ, দালালবাজার, লাহারকান্দি ও দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে।