যশোরের শার্শা উপজেলা পাঁচভুলোট সীমান্তে অস্ত্রের আঘাত ও পিটুনিতে নিহত আরও এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে আজ বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিন যুবকের লাশ উদ্ধার হলো। তাঁদের মধ্যে দুজনের লাশ সীমান্ত থেকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। অপরজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে স্বজনেরা বাড়িতে আনার পর তিনি মারা যান। তিনজনের একই ধরনের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে।
বিকেলে সর্বশেষ লাশ উদ্ধার হওয়া যুবকের নাম সাকিবুর রহমান (২০)। তিনি চৌগাছা উপজেলার শাহজাদপুর গ্রামের জামিনুর রহমানের ছেলে। শৈশব থেকেই তিনি শার্শা উপজেলার দীঘিরপাড় গ্রামে নানাবাড়িতে বসবাস থাকতেন। তাঁর লাশটি শার্শার রুদ্রপুর সীমান্ত থেকে বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার করে শার্শা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
এর আগে সকালে লাশ উদ্ধার হওয়া দুই যুবক হলেন শার্শা উপজেলার কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুস মোড়লের ছেলে মো. জাহাঙ্গীর (৩৩) এবং দীঘিরপাড় গ্রামের আরিফ মোড়লের ছেলে শাহাবর আলী (৩৫)। এর মধ্যে সকালে জাহাঙ্গীরের মরদেহ তাঁর বাড়ি থেকে বেনাপোল থানা-পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে। তারও আগে শাহাবরের মরদেহ শার্শা সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে উদ্ধার করে বিজিবি শার্শা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
তিনটি লাশের মধ্যে শার্শা থানা-পুলিশ দুটি ও বেনাপোল থানা-পুলিশের তত্ত্বাবধানের একটি লাশ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে চোরাচালানের মাধ্যমে জিরা আনতে গিয়েছিলেন একসঙ্গে পাঁচজন। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। অপর দুজন এখনো নিখোঁজ। তবে তাঁদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমরাও এমন তথ্য পেয়েছি। তবে কারা কারা ওই রাতে গিয়েছিল, কেউ স্বীকার করছে না।’
তিনজনের হত্যার কারণ জানতে চাইলে বিজিবি ও পুলিশের কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের দুজন কর্মকর্তা বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা কুপিয়ে ও পিটুনি দিয়ে তিনজনের মৃত্যু ঘটিয়েছেন। বিজিবি কর্মকর্তারা বলেন, বিএসএফের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা গেছে, সকালে সীমান্তের ইছামতী নদীতে একজনের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন খুলনা ব্যাটালিয়নের (২১ বিজিবি) সদস্যদের খবর দেন। বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে বেওয়ারিশ অবস্থায় শার্শা থানা-পুলিশের কাছে লাশটি হস্তান্তর করেন। লাশের মাথার পেছনের অংশে জখমের চিহ্ন রয়েছে। এদিকে বেনাপোল থানা-পুলিশ শার্শা উপজেলার কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুস মোড়লের বাড়ি থেকে জাহাঙ্গীরের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। বিকেলে রুদ্রপুর সীমান্ত থেকে আরও একটি লাশ উদ্ধার করে বিজিবি সদস্যরা শার্শা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
এলাকাবাসী ও পুলিশ আরও জানায়, রাতে জাহাঙ্গীর, সাকিবুর, শাহবরসহ কয়েকজন একসঙ্গে ভারত সীমান্তের কাঁটাতারের ভেতরে প্রবেশ করেন। তখন বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের কুপিয়ে ও মারধর করে ইছামতী নদীতে ফেলে দেন। সেখান থেকে জাহাঙ্গীরকে তাঁর স্বজনেরা উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। পুলিশকে না জানিয়ে সকালে জাহাঙ্গীরের লাশ দাফনের চেষ্টা করেন পরিবারের স্বজনেরা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল বন্দর থানার ওসি রাসেল মিয়া বলেন, একই ঘটনায় তিনজন জখম হন। তাঁদের মধ্যে দুজনের লাশ সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। অপরজনের লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএসএফ সদস্যরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে ওই তিনজনকে ইছামতী নদীতে ফেলে দেন। এতেই ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আরেকজনের পরে মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়েছে কি না, জানতে চাইলে বিজিবি খুলনা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খুরশিদ আনোয়ার বলেন, ‘একজনের লাশ উদ্ধারের বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে বিএসএফের কাছে জানতে চাইলে তাদের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে।’