কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে, ধরলা–দুধকুমারের পানি কমছে

নদ-নদীর পানি বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বড় দরগা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর পানি কমলেও এখনো বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদের পানি কমছে। পানি বাড়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদের তীরবর্তী জমির ফসল ডুবে গেছে। গবাদিপশুর চারণভূমি গেছে তলিয়ে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরের বাসিন্দা ইনছান আলী বলেন, ‘আজ চার দিন থাকি ঘরত পানি, রান্না বসার পাছু না। কোনোমতে এক বেলা রান্না করি দুই বেলা খাই। মেম্বার-চেয়ারম্যান কায়ো ত্রাণ নিয়া আসিল না। সাংবাদিক খালি আসিয়া ছবি তুলি নিয়া গেইছে। কায়ো হামাক ত্রাণ দেয় না।’

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত বাড়িঘর। বুধবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর এলাকায়

কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, আজ বুধবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার, ধরলা নদের পানি সদর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোজাফফর হোসেন জানান, প্রায় এক মাস আগে একবার তিন বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান লাগালে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। চারাসংকটের কারণে দুই বিঘা জমিতে গত রোববার আবার ধান লাগিয়েছেন। সেটাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এবার ধানের চারা নষ্ট হলে আর ধান চাষ করা হবে না।

পানিবন্দী মানুষের জীবনযাপন। বুধবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর এলাকায়

তিস্তার পানি এক সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমলেও বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। এতে উলিপুর উপজেলার বজরা, থেতরাই ইউনিয়নে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। বজরা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান বলেন, এক সপ্তাহে তিস্তার ভাঙনে বজরা ইউনিয়নের সাদুয়া দামার হাট, খামার দামার হাট এলাকার প্রায় ৭০টি পরিবার বসতবাড়ি হারিয়েছে। তিস্তার ভাঙনে খামার দামার হাটের একটি স্কুল হুমকির মধ্যে আছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার বলেন, জেলার নদ-নদীর পানি বাড়ার কারণে ২ হাজার ৪০ হেক্টর রোপা আমন ধান, ৯৮ হেক্টর সবজিখেত এবং ১৬ হেক্টর বীজতলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতলে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি আরও বলেন, তিস্তা নদীর পানি পাঁচ দিন ধরে বিপৎসীমার ওপরে আছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ, সাহেবের আগলা এবং চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলের ইউনিয়নে পানি আগামী কয়েক দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে আগামী ১০ দিন বড় কোনো বন্যার আশঙ্কা নেই।