কেউ নিয়ে গেছে ঘরের টিন, কেউ নিয়েছে আসবাব। ঘরে থাকা টিভি, ফ্রিজ, হাঁড়ি-পাতিল সবকিছুই লুট করা হয়েছে। দাঁড়িয়ে ছিল ঘরের খুঁটিগুলো। সেগুলোও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রড ও মেঝের ইটগুলো মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। ঘরগুলোতে বসবাসকারীরা অবস্থান নিয়েছেন খোলা মাঠে, গাছের ছায়ায়। কেউ পুড়ে যাওয়া টিনের অবশিষ্টাংশ দিয়ে খোলা মাঠে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছেন।
এ অবস্থা দিনাজপুর সদর উপজেলার বাঙ্গিবেচা ঘাটসংলগ্ন মাঝাডাঙ্গা এলাকায়। ২০১১ সালে পুনর্ভবা নদীর তীরে প্রায় পাঁচ একর জমিতে ‘বাঙ্গিবেচা দুস্থ ও পুনর্বাসন আশ্রয়ণ প্রকল্প মানবপল্লী’ উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম। এখানে ১২৫টি পরিবারের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে ৮০ জন হিজড়া এবং বাকি ঘরগুলো ছিল দুস্থ ও অসহায় মানুষদের জন্য।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদ ও দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতে প্রথম দফায় এখানে হামলা ও লুটপাট করা হয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার থেকে বসবাসকারীদের চোখের সামনে ঘরের ইট ও খুঁটি ভেঙে লোহার রড কেটে নিয়ে যান হামলাকারীরা।
আজ বুধবার দুপুরে মানবপল্লী ঘুরে দেখা যায়, ঘরগুলোতে বসবাসকারীরা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। পাশেই হাতুড়ি-শাবল দিয়ে কয়েকজন ঘরের খুঁটি ও একটি পাকা ঘরের দেয়াল ভেঙে ইট মাথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। টিউবওয়েল খুলে নিয়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির কষ্টে আছেন তাঁরা।
নূর বানু নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘সোমবার বিকেলে পাশের মসজিদ থেকে মাইকিং করে ঘরের মালপত্র দ্রুত সরায় নিতে বলে। যে যতটুকু পারছি সরাইছি। কিন্তু ভারী জিনিসপত্র তো আর সরানো যায় না। সন্ধ্যার আগে আগে ২০০ মানুষ এসে ভাঙচুর শুরু করে। পানি যে খাব, তার ব্যবস্থাও নেই। টিউবওয়েলগুলো খুলে নিয়ে গেছে ওরা।’
সাদিকুর রহমান নামের একজন বলেন, ‘আমরা ১২৫ বাড়ির সবটাতে পরিবার ছিলাম। আমাদের কোনো বাড়িঘর নাই। হিজড়ারাই আমাদের এখানে থাকতে দিয়েছিল। হুদাহুদি আতঙ্ক করে আমাদের মালপত্রগুলো লুট করি নি গেল। কী খাব, কী করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে অনগ্রসর ভূমিহীন ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জন্য এই মানবপল্লী তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়।