সিলেট সিটি নির্বাচন

ব্যক্তিগত আয়, ধারকর্জ আর দানের টাকায় নির্বাচন করছেন মেয়রপ্রার্থীরা

নির্বাচন
প্রতীকী ছবি

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন আটজন। তাঁদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। অন্য প্রার্থীদের মধ্যে তিনজন নিজেদের আয়ের টাকায় নির্বাচন করবেন। অন্যরা নিজেদের আয়ের পাশাপাশি ধারকর্জ ও স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দানের টাকায় নির্বাচনের খরচ মেটাবেন।

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য জানা গেছে। ইসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রার্থীরা হলফনামার সঙ্গে ‘ফরম-ঢ’ জমা দিয়েছেন। এতে তাঁরা নির্বাচনে খরচের জন্য অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস এবং খাতওয়ারি সম্ভাব্য ব্যয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে জমা দিয়েছেন। আগামী বুধবার এই সিটিতে ভোট গ্রহণ হবে।

সিটি নির্বাচনের প্রধান দুই সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল)। তাঁদের মধ্যে মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস হিসেবে নিজের আয়ের ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। এ টাকার পুরোটাই তিনি সম্ভাব্য ব্যয় হিসেবে দেখিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ব্যয়ের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ১ লাখ পোস্টার ছাপানো বাবদ তাঁর খরচ হবে ২ লাখ টাকা। ৪টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন ও সেখানে কর্মীদের বাবদ খরচ পড়বে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন ও সেখানে কর্মীদের বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা। প্রার্থী বা এজেন্ট ও কর্মীদের যাতায়াত বাবদ ধরা হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ঘরোয়া বৈঠক বা সভা বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৪১ হাজার টাকা। ২ লাখ লিফলেট ছাপায় খরচ ধরা হয়েছে ২ লাখ টাকা।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৫০ হাজার হ্যান্ডবিল ছাপতে খরচ ধরেছেন ৫০ হাজার টাকা। তাঁর ১০০টি ব্যানার ছাপা ও সাঁটানো বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। ৪২টি পথসভা আয়োজনে খরচ ধরা হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। মাইকিং বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। নির্বাচনী কার্যালয়ে আপ্যায়ন বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। বিবিধ খরচ ধরা হয়েছে ৫৭ হাজার টাকা।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস হিসেবে নিজের আয়ের ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করবেন বলে ‘ফরম-ঢ’-তে উল্লেখ করেছেন। এ টাকার পুরোটাই তাঁর সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় হিসেবে দেখিয়েছেন। ব্যয়ের মধ্যে তিনি ২৫ হাজার পোস্টার ছাপানো বাবদ ১ লাখ টাকা খরচ করবেন। এ ছাড়া ১০টি নির্বাচনী কার্যালয় কিংবা ক্যাম্প স্থাপন বাবদ তাঁর ব্যয় হবে ১ লাখ টাকা। এসব কার্যালয়ে কর্মীদের জন্য ব্যয় ধরেছেন ৭৫ হাজার টাকা। কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কার্যালয় স্থাপন বাবদ ১ লাখ টাকা এবং সেখানের কর্মীদের খরচ বাবদ ধরা হয়েছে আরও ১ লাখ টাকা।

নজরুল ইসলাম প্রার্থী, নির্বাচনী এজেন্ট ও কর্মীদের যাতায়াত বাবদ খরচ ধরেছেন ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তাঁর ঘরোয়া বৈঠক ও সভা বাবদ সর্বমোট খরচ ধরা হয়েছে ৯৫ হাজার টাকা। দেড় লাখ লিফলেট ছাপা বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। ১ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপা বাবদ খরচ ধরা আছে ৪০ হাজার টাকা। ৪০০ ব্যানার ছাপা ও সাঁটানো বাবদ খরচ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ১০০টি ডিজিটাল ব্যানার ছাপা ও সাঁটানো বাবদ ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা, ৩০০টি পথসভায় মাইক ও হ্যান্ডমাইক বাবদ ৫০ হাজার টাকা, মাইকিং খরচ বাবদ ৮০ হাজার টাকা ধরা আছে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পোর্ট্রেট খরচ বাবদ ১৫ হাজার টাকা, প্রতীক তৈরি বাবদ খরচ ৩৫ হাজার টাকা, ১০টি কার্যালয়ে আপ্যায়ন বাবদ খরচ ১ লাখ টাকা, ১০০ জন কর্মীর আপ্যায়ন বাবদ খরচ ১ লাখ টাকা এবং টেলিভিশন ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা বাবদ খরচ ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বিবিধ খাতে তাঁর খরচ রাখা হয়েছে ৪০ হাজার টাকা।

‘ফরম-ঢ’ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা ৬৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম ২৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা নির্বাচনের সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন। যদিও এ নির্বাচনে একজন মেয়রপ্রার্থীর সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস থেকে ৭১ লাখ টাকা পাবেন বলে উল্লেখ করেছেন। নিজ আয়, ধারকর্জ, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান থেকে এসব টাকা তিনি পাবেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তিনি নির্বাচনে বিভিন্ন খাতে সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন ৬৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম বিভিন্ন উৎস থেকে ৩০ লাখ টাকা পাবেন বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি সম্ভাব্য ব্যয় দেখিয়েছেন ২৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শাহ জাহান মিয়া নিজের পেশা টিউশনির আয়ের ৫০ হাজার টাকা সম্ভাব্য অর্থপ্রাপ্তির উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন। তিনি সম্ভাব্য খরচ দেখিয়েছেন ৪৮ হাজার টাকা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস থেকে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাবেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে তাঁর নিজের জমানো ৬০ হাজার টাকা রয়েছে। বাকি ৩ লাখ টাকা পাবেন সাবেক একজন চাকরিজীবী ও দুই প্রবাসী আত্মীয়ের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে। তিনি সম্ভাব্য খরচ দেখিয়েছেন ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাব্য উৎস থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা পাবেন বলে উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে নিজের ব্যবসার আয় থেকে ৫ লাখ টাকা পাবেন। বাকি টাকার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ছেলের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত দান হিসেবে পাবেন দেড় লাখ টাকা। তিনি সম্ভাব্য নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩০০ টাকা।

যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন শেষে মেয়রপ্রার্থীরা খরচের যে হিসাব রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেবেন, সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। কেউ যদি হলফনামায় সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাব বেশিও লিখে থাকেন, তিনি নির্ধারিত ১৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করতে পারবেন না।