টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে লোকালয়। আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের জৈন্তাপুরের বাংলাবাজার এলাকায়
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে লোকালয়। আজ বৃহস্পতিবার সিলেটের জৈন্তাপুরের বাংলাবাজার এলাকায়

সিলেটে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, ৫ হাজার ৬০১ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি হু হু করে বাড়ছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সব মিলিয়ে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অনেকেই পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলার ৫ হাজার ৬০১ হেক্টর জমির ফসল প্লাবিত হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, কী পরিমাণ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পানিবন্দী মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে ও নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। প্রয়োজনে তা বাড়ানো হবে।

সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, সারি ও গোয়াইন নদ-নদীর পাঁচটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য নদ-নদীর পানি কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় প্লাবিত গ্রামের সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলায়। জেলা সদরের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের তিনটি রাস্তাই তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিনের উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলছে। এতে অনেক পরিবারই পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নৌকার অভাবে অনেকে নিরাপদে সরতেও পারছেন না। ফলে অসহায় হয়ে পড়েছেন অনেক মানুষ।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তাঁর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৪২ হাজার ৯০০টি পরিবারের ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন মানুষ দুর্যোগকবলিত। এখানে চালু হওয়া আশ্রয়কেন্দ্রে ২ হাজার ৩৫৬ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৬৪৫। উপজেলায় ১০টি মেডিকেল টিম চালু করা হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় ৩৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর কৃষিজমি তলিয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় জরুরি ভিত্তিতে ৪৭০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাটে ৫৬টি, জৈন্তাপুরে ৪৮টি, কানাইঘাটে ১৮টি, কোম্পানীগঞ্জে ৩৫টি, জকিগঞ্জে ৫৮টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। বাকি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো অন্যান্য উপজেলায় রয়েছে।

সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কের জৈন্তাপুরের বিরাইমারা এলাকায় একটি ট্রাকে আশ্রয় নিয়েছেন চারটি পরিবারের সদস্যরা। বৃহস্পতিবার সকালে

জৈন্তাপুরের চাংগিল বাজারে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া বিরাইমরা গ্রামের রানু বেগম (৫০) বলেন, দুই ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতনি মিলে তাঁরা সাতজন আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। বাড়ি প্লাবিত হওয়ায় নৌকায় করে তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে আসেন। ঘরের ভেতর যা ছিল, প্রায় সবই পানিতে ভেসে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে মোট ৫ হাজার ৬০১ হেক্টর আউশ ধান, আউশ বীজতলা ও সবজিখেত কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে আউশ ধানের জমি রয়েছে ১ হাজার ৬৮২ হেক্টর। এ ছাড়া ৯২৭ হেক্টর আউশ বীজতলা ও ২ হাজার ৯৯২ হেক্টর সবজিখেত রয়েছে।

ছাগলগুলোকে খাবার দিচ্ছেন এক ব্যক্তি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট-তামাবিল আঞ্চলিক মহাসড়কের জৈন্তাপুরের বিরাইমারা এলাকায়

সিলেটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোহাম্মদ আনিছুজ্জামান বলেন, দুর্যোগে আক্রান্ত আউশ ও সবজি ফসলের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেটা এখন নির্ধারণ করা কঠিন। পানি নেমে গেলেই এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা সম্ভব হবে।

আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল অব্যাহত থাকায় পানি ক্রমেই বাড়ছে।