কদিন আগেও ময়মনসিংহ নগরের দেয়ালগুলোর দিকে তাকানো যেত না। রাজনৈতিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনী পোস্টারে ছেয়ে ছিল। এখন দেয়ালজুড়ে নান্দনিকতা। দেয়ালের সব নোংরা পরিষ্কার করে নতুন বাংলাদেশকে নান্দনিকভাবে সাজাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। দলবেঁধে শিক্ষার্থীরা দেয়ালে দেয়ালে তুলে ধরছেন আন্দোলনের নানা স্মৃতিপট, নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়, অসাম্প্রদায়িক চেনতার বাংলাদেশ। রংপুরের আবু সাঈদ কিংবা মুগ্ধর ‘পানি লাগবে, পানি’ এই আহ্বানের ছবিও। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে রক্তাক্ত জুলাইকে গ্রাফিতির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে।
আজ রোববার সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত নগরের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মোড়, নতুন বাজার হরিকিশোর রায় রোড, টাউন হল মোড়, জিলাস্কুল মোড় ঘুরে দেখা গেছে, দেয়ালগুলোর নোংরা পরিষ্কার করে তাতে আঁকা হচ্ছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গৌরবময় নানা গ্রাফিতি। একদল শিক্ষার্থী রং তুলি নিয়ে গ্রাফিতিতে মেতে আছে; আরেকদল সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের গ্রাফিতি শিল্প ও সংস্কৃতি মনিটরিং কমিটির টিম লিডার গকূল সূত্রধর মানিক বলেন, ‘আমরা গ্রাফিতির যে কাজগুলো করছি, এর মাধ্যমে দেশের মানুষকে আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, এই দেশটা আমাদের। এটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। আমাদের যখন রাষ্ট্রকে সংস্কার করতে হবে, তখন অবশ্যই শিল্পকে সামনে রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ করতে হবে। আমরা যদি শিল্পীর জায়গায় না থাকতে পারি, শৈল্পিক সংস্কার না করতে পারি, তাহলে রাষ্ট্রের যে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার, তা আমরা করতে পারব না।’
সকাল সাড়ে ১০টা। ময়মনসিংহ নগরের ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড এলাকার মহিলা কলেজের দেয়ালে আঁকছিলেন মুকুল নিকেতন উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিসো সাদ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক সহপাঠী। আপন মনে দেয়ালে আঁকছিলেন রংপুরের আবু সাঈদের ঐতিহাসিক ছবি। এ সময় নিসো সাদ বলেন, ‘দেশে একটি বড় ঘটনা ঘটেছে, এতে অনেক মানুষ শহীদ হয়েছেন। যাঁর ছবি আঁকছি, তিনি হচ্ছেন আবু সাঈদ। মানুষ যেন ভুলে না যায়, তাঁর স্মৃতি যেন মানুষ মনে রাখে, সে জন্য দেয়ালে আঁকছি। রাস্তা ধরে যত মানুষ যাবে, সবাই তাঁকে দেখবে, স্মৃতি আবার মনে পড়বে।’
নগরের হরিকিশোর রায় রোডের সড়কে গ্রাফিতি করছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাবিহা বিনতে শরীফ। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় দেয়ালগুলো নানাভাবে নষ্ট করা হয়েছিল। এখন নতুন করে দেয়ালগুলো রাঙানোর কাজ করছি। আন্দোলনের সময় আমরা যা করেছি, তা নিজেদের উদ্যোগে দেয়ালে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। দেশকে আবার নতুনভাবে সাজানোর জন্য আমরা কাজগুলো করছি।’
কোটা সংস্কার ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসন থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এর পরই শিক্ষার্থীরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। নানা কাজ নিজেরা হাতে নিয়েছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, বাজার তদারকি ও দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতি করে নান্দনিকতার পাশাপাশি আন্দোলনের স্মৃতি তুলে ধরা হচ্ছে।