র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ইয়ার মোহাম্মদ ওরফে পারভেজ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে তাঁকে নগরের চাষাঢ়া থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব
র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ইয়ার মোহাম্মদ ওরফে পারভেজ। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে তাঁকে নগরের চাষাঢ়া থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব

ত্বকী হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের আরেক সহযোগী গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের আরেক সহযোগী ইয়ার মোহাম্মদ ওরফে পারভেজকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে শহরের চাষাঢ়া এলাকা থেকে র‌্যাব-১১-এর একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার ইয়ার মোহাম্মদ শহরের চাষাঢ়া এলাকার আলী হোসেনের ছেলে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাফিয়া শারমীনের আদালতে হাজির করার পর শুনানি শেষে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে ত্বকী হত্যা মামলায় মোট পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলো।

র‌্যাব-১১-এর গণমাধ্যম কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার সনদ বড়ুয়া বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ত্বকী হত্যা মামলায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে ইয়ার মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আবদুর রশিদ তাঁকে (ইয়ার মোহাম্মদ) ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ত্বকী হত্যা মামলায় আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক মো. জামশেদসহ চার ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১। এর মধ্যে আজমেরী ওসমানের সহযোগী কাজল হাওলাদার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্য দুই আসামি শাফায়েত হোসেন ও মামুন মিয়াকে ছয় দিনের রিমান্ড শেষে গত রোববার আদালতে তোলা হয়। পরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের আরও পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক জামশেদ পাঁচ দিনের রিমান্ডে আছেন।

আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে এবং আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ভাতিজা। আসামিরা আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত (ভ্রমর) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।

২০১৪ সালের ৫ মার্চ তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে আজেমরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি।

দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচার ও ঘাতকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখে ধারাবাহিকভাবে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। প্রতিবছর সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং গোলটেবিল বৈঠক ও আলোচনা সভার আয়োজন করে আসছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ত্বকী হত্যা মামলার বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরপর আজমেরী ওসমানের সহযোগী শাফায়েত হোসেন, মামুন মিয়া, কাজল হাওলাদার ও গাড়িচালক জামশেদকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১। দীর্ঘদিন ত্বকীর হত্যাকারী আজমেরী ওসমান প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পর ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়।