দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছেন বলে গুঞ্জন চলছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি আদালত থেকে আজ সোমবার বিস্ফোরক মামলায় জামিন লাভের পর দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাঁর নামে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।
একরামুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন। এ জন্য তিনি আজ আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিন নিয়েছেন। এ বিষয়ে অবশ্য একরামুজ্জামান এখনই কিছু খোলাসা করতে রাজি হননি।
নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা একরামুজ্জামান অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী, নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন। তিনি আর এ কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। উপজেলায় বিএনপির এই নেতার জনপ্রিয়তা রয়েছে।
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা প্রথম আলোকে বলেন, ২ নভেম্বর সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে বিস্ফোরক আইনে ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা হয়। নাসিরনগর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের কাঁশফুল রেস্তোরাঁর সামনে ওই দিন রাত আটটার দিকে সরকারি কাজে বাধাদান, হত্যার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। মামলায় সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানকে ৪ নম্বর আসামি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও আদালত সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে নিজ গাড়িতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ আদালত চত্বরে আসেন একরামুজ্জামান। পরে তিনি আইনজীবী সমিতি ভবনের তৃতীয় তলায় এক আইনজীবীর কক্ষে বসেন। দুপুর দিকে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৃতীয় আদালতে (নাসিরনগর আমলি আদালত) বিস্ফোরক আইনের ধারার এক মামলায় হাজিরা দেন।
আইনজীবীদের শুনানির একপর্যায়ে আদালতকক্ষে উপস্থিত জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মামুন বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি এই মামলায় ওনাকে (একরামুজ্জামান) জামিন দেন। কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সব অপরাধী যেন সমান বিচার পায়, সেদিকটি বিবেচনার অনুরোধ করি।’ একই মত দেন জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান চৌধুরী। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রকিবুল হাসান শুনানি শেষে তাঁর জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালতে একরামুজ্জামানের পক্ষে জামিন শুনানি করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবী আলী আজম। তিনি বলেন, ঢাকার একটি মামলায় ২ নভেম্বর ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেছিলেন একরামুজ্জামান। ওই মামলাতেও সেদিন আদালত তাঁকে জামিন দেন।
বিএনপি নেতা ও আইনজীবী কামরুজ্জামান মামুন প্রথম আলোকে বলেন, একরামুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন। তিনি তাঁর লোকজন দিয়ে নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আঁতাত ছাড়া এই মামলায় তাঁর জামিন পাওয়ার কোনো কথাই নয়। এটা তো দৃশ্যমান।
জামিন পাওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান বলেন, ‘আমি মাত্র জামিন পেয়েছি। একটু স্থির হতে দেন আমাকে। এরপর চিন্তা করব।’ তৃণমূল বিএনপির থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, আমি তৃণমূল বিএনপি থেকে কোনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করিনি।’ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তো যে কেউই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারে। আমি আগে স্থির হতে চাই। এখনই কোনো কিছু খোলাসা করতে চাচ্ছি না।’
এদিকে আজ বেলা ৩টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের নামে মনোনয়নপত্র তোলা হয়। তাঁর পক্ষে মো. বকুল মিয়া একজন মনোনয়নপত্রটি সংগ্রহ করেছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. কাউসার আহমেদ প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে একরামুজ্জামান ৬০ হাজার ৭৩৪ ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকে ১ লাখ ১ হাজার ১১০ হাজার ভোট পেয়ে জয়ী হন। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত ছায়েদুল হক নৌকা প্রতীকে ৯৯ হাজার ৮৮৬ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।