মাঠে নেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা, জাপার লোকজনও ভোট চাইছেন সাত্তারের পক্ষে

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজের মাঠে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন। গতকাল রোববার বিকেলে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

শেষ মুহূর্তে এসে মাঠে নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। এখন দৃশ্যমান প্রার্থী কেবল উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াই। জাপার প্রার্থীর লোকজনও এখন সাত্তারের পক্ষে কাজ করছেন। এতে সাত্তারের পথ এখন আরও পরিষ্কার।

৮ জানুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্বাচনের মাঠে ছিলেন আট প্রার্থী। পরে দলীয় নির্দেশে আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীসহ তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর জাতীয় পার্টির দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধাও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন চার প্রার্থী।

সাত্তারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু আসিফ আহমেদ গত শুক্রবার থেকে নিখোঁজ। আজ সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার লোকজনও শেষ পর্যন্ত মাঠ ছেড়েছেন। অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আইনজীবী আবদুল হামিদ ভাসানী প্রচারণার শুরু থেকেই তেমন জমাতে পারেননি। তাঁর প্রচারণায় দলীয় নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ছিল খুবই কম।

আবু আসিফ আহমেদ মাঠ ছাড়ার পর থেকে প্রশাসনের লোকজন নজর দিয়েছেন জাপার প্রার্থীর দিকে। পুলিশ সদস্যদের দুই দিন ধরে জাপার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টদের তালিকা করতে দেখা গেছে।

উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জাপার প্রার্থীর কর্মী ছিলেন এক তরুণ। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ইচ্ছা ছিল লাঙলের এজেন্ট হব। আজ সিদ্ধান্ত নিলাম ভোটকেন্দ্রেই যাব না। শুনছি আমাদের তালিকা করা হচ্ছে।’


জাপায় বিভক্তি
এ আসন থেকে নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আইনজীবী জিয়াউল হক মৃধা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি জিয়াউলের পরিবর্তে মনোনয়ন দেয় তাঁর মেয়ের জামাতা সদর উপজেলার বাশুদেব ইউনিয়নের কোড্ডা গ্রামের বাসিন্দা দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব আইনজীবী রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়াকে (লাঙল)। ওই নির্বাচনে জিয়াইল হক মৃধা হন স্বতন্ত্র প্রার্থী। জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত জিয়াউল হক বিএনপির উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়ার কাছে পরাজিত হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় জাপার নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। দলের বড় অংশটির নেতৃত্বে আছেন জিয়াউল হক। অপর ক্ষুদ্র অংশের নেতৃত্বে আছেন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া।

আসন্ন উপনির্বাচনে প্রথমে প্রার্থী হন রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। পরে প্রার্থী হন আবদুল হামিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জিয়াউল হক মৃধা। দলের দুই প্রার্থীর প্রচারণায় এগিয়ে ছিলেন জিয়াউল হক। জিয়াউলের নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ যখন জমে উঠেছিল, ঠিক তখনই মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি।

জিয়াউলও চান সাত্তার নির্বাচিত হোক
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর জিয়াউল হক মৃধা অনেকটা নীরবেই ছিলেন। কোনো প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করছিলেন না। তবে দুই–এক দিন ধরে তাঁকে সাত্তারের পক্ষে কথা বলতে শোনা গেছে।

জিয়াউল হক আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি (সাত্তার ভূঁইয়া) প্রবীণ ব্যক্তি। তিনি যখন দাঁড়াইছেই সবাই মিলে তাঁকে পার করে দেই। সাত্তার সাব চার-পাঁচবার এমপি ছিলেন। এখন শেষ সময়। তিনি এলাকার জন্য কি করছে না করছে সেটা বড় কথা নয়। শেষ সময়ে সম্মান পেয়ে যাক। এটাই বড় কথা।’

জাপার দুই চেয়ারম্যান সাত্তারের পক্ষে
গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ৯টি ইউপির মধ্যে দুটি থেকে জাপার প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁরা হলের জাপার জেলা কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া এবং উপজেলা কালীকচ্ছ ইউনিয়ন শাখা জাপার সভাপতি ছায়েদ হোসেন। মোশাররফ হোসেন অরুয়াইল আর ছায়েদ কালীকচ্ছ ইউপির চেয়ারম্যান। তাঁরা দুজনই দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তে কলার ছড়ার পক্ষে কাজ করছেন।

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত হামিদ। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি মনে করি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু আমার জাতীয় পার্টির নেতা–কর্মী ও এজেন্টদের তালিকা করছে পুলিশ প্রশাসন। এতে আমার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। অনেক জায়গাতেই কেউ এজেন্ট হতে চাইছেন না।’

আপনার দলের লোকজনই তো সাত্তারের পক্ষে কাজ করছেন—এমন কথার জবাবে হামিদ বলেন, প্রশাসনের চাপে কেউ কেউ সাত্তারের পক্ষে কাজ করছেন। এ কারণে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে একাধিক নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে।  
পুলিশের তালিকা করার বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তালিকা করার বিষয়টি সঠিক নয়। তারা কোনো তালিকা করছে না।