হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় তাঁর কথিত এক স্ত্রীর দায়ের করা ধর্ষণ মামলায় আরও দুজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হকের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
আদালতে সাক্ষ্য দেন সোনারগাঁয়ের রয়েল রিসোর্টের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও সাংবাদিক নুর নবী। এ মামলায় ৪০ সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
এর আগে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামুনুল হককে কাশিমপুর কারাগার থেকে নারায়ণগঞ্জের আদালতে আনা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাঁকে আবার পুলিশের প্রহরায় কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মামুনুল হকের অনুসারীরা তাঁর মুক্তি চেয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী এ কে এম ওমর ফারুক নয়ন প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দির সঙ্গে সাক্ষ্যের কোনো মিল নেই। জেরাকালে সাক্ষীরা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি। মামলার বাদীর ছেলে তাঁর জবানবন্দিতে বলেছেন, মামুনুল হকের সঙ্গে তাঁর মায়ের বিয়ে হয়েছে। মামলার বাদী চাপে পড়ে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করেছেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি রকিব উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষীরা সবাই বলেছেন, মামুনুল ধর্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, এ মামলায় এ পর্যন্ত ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি মামুনুল হক আদালতে বিয়ের কোনো কাবিননামা দাখিল করতে পারেননি।
২০২১ সালের ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টের একটি কক্ষে কথিত স্ত্রীসহ হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে স্থানীয় ছাত্রলীগ-যুবলীগ। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মামুনুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় হেফাজত ও মাদ্রাসার ছাত্ররা রিসোর্টে হামলা চালিয়ে মামুনুল ও তাঁর কথিত স্ত্রীকে ছিনিয়ে নেয়।
ওই ঘটনার ১৫ দিন পর মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ। রয়েল রিসোর্ট–কাণ্ডের ঘটনার ২৭ দিন পর ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল সোনারগাঁ থানায় হাজির হয়ে মামুনুলের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণের মামলা করেন তাঁর কথিত স্ত্রী।
ধর্ষণের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে মামলায় অভিযোগপত্র দায়ের করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই বছরের ৩ নভেম্বর মামুনুল হকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল ধর্ষণের মামলায় অভিযোগ গঠন করেন।