কুয়েতে দণ্ডিত পাপুলের আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান তাঁর স্ত্রী

সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম এবং লক্ষ্মীপুর-২ আসনে আসনের সংসদ সদস্য নুরউদ্দিন চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে (রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদরের আংশিক) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন সেলিনা ইসলাম। তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (কুয়েতে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের দায়ে দণ্ডিত) মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম ওরফে পাপুলের স্ত্রী। সেলিনা সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্যও। গতকাল মঙ্গলবার তিনি এ আসনে প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন ও জমা দেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সেলিনা ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেননি। তবে তাঁর পক্ষে মনোনয়ন ফরম জমাদানকারী গিয়াস উদ্দিন সোহাগ বলেন, সেলিনা ইসলাম লক্ষ্মীপুর-২ আসন থেকেই নির্বাচনের কথা ভাবছেন। দল তাঁকে মূল্যায়ন করে মনোনয়ন দেবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।

২০২১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শহিদ ইসলামের সংসদ পদ শূন্য ঘোষণা করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। এরপর উপনির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নুরউদ্দিন চৌধুরী ওরফে নয়ন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এবারের নির্বাচনে সেলিনা ইসলাম, নুরউদ্দিন চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন মোট সাতজন। বাকিরা হলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য এ এফ জসিম উদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের উপ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক সামছুল ইসলাম পাটোয়ারী, রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মিরাজ মুক্তাদির, এসেনসিয়াল ড্রাগসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসানুল কবির এবং প্রবাসী নেওয়াজ শরীফ।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসনটি শুরুতে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। জাপার মনোনয়ন পান আগেরবারের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নোমান। কিন্তু মনোনয়ন পাওয়ার পর নোমান নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান। যদিও বাস্তবে নোমান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। এ কারণে ব্যালটে প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ও দলীয় প্রতীক লাঙ্গল ছিল। তিনি মূলত ওই সময়ে গা ঢাকা দিয়েছিলেন।

তখন জাপার উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বেইলি রোডের বাসায় একটি বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জাপার প্রতিনিধির কাছে লক্ষ্মীপুর-২ আসন শহিদ ইসলামকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন এইচ টি ইমাম। এ কারণে জাপা আসনটি ধরে রাখেনি, আওয়ামী লীগও প্রার্থী দেয়নি। পরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে চিঠি দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের পক্ষে কাজ করার জন্য দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আট দিন আগে ওই চিঠি পাঠানো হয় লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকার মানুষের কাছে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে শহিদ ইসলামের আকস্মিক প্রার্থী হওয়া এবং নির্বাচিত হওয়া ছিল পিলে চমকানোর মতো। যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। নিজে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হওয়ার পর সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে সংসদ সদস্য বানান।

মানব পাচারের অভিযোগে ২০২০ সালের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় শহিদকে। ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি তাঁকে সাজা দেন কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। বিচারক রায়ে শহিদকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তখন থেকে কুয়েতের কারাগারে আছেন তিনি।