বগুড়ার সান্তাহার ছেড়ে আসা বোনারপাড়াগামী ‘ফোর নাইনটি কলেজ ট্রেনে’র ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। রোববার রাত আটটা ৪০ মিনিটে বগুড়ার গাবতলী রেলস্টেশনে যাত্রাবিরতির আগেই ট্রেনটির ওই ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।
এ ঘটনার পর প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এদিকে গাবতলী ও সুখানপুকুর স্টেশনে আটকা পড়েছে লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী ‘পদ্মরাগ এক্সপ্রেস’ এবং বুড়িমারী থেকে ছেড়ে আসা সান্তাহারগামী ‘করতোয়া এক্সপ্রেস নামে দুটি ট্রেন। দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন শত শত যাত্রী।
রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারের জন্য সান্তাহার থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ডাকা হয়েছে। এ নিয়ে গত এক মাসে ঢাকা-সান্তাহার-লালমনিরহাট রুটে তিন দফা ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
বগুড়া রেলস্টেশনের মাস্টার সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারে সান্তাহার থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন ডাকা হলেও রাত একটার আগে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
এদিকে বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় বুড়িমারী-সান্তাহার-ঢাকা পথে চলাচলকারী আন্তনগর ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেন নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। রাত ১২টায় বুড়িমারী থেকে ছেড়ে আসা আন্তনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি বগুড়া রেলস্টেশনে পৌঁছার কথা।
বগুড়া রেলস্টেশনের মাস্টার সাজেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসে বোনারপাড়াগামী ‘ফোর নাইনটি কলেজ ট্রেন’। নির্ধারিত যাত্রাবিরতির পর রাত ৮টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি বগুড়া রেলস্টেশন অতিক্রম করে। ট্রেনটি গাবতলী রেলস্টেশনে পৌঁছার পর সান্তাহারগামী পদ্মরাগ এক্সপ্রেসের সঙ্গে ক্রসিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাত ৮টা ৪০ মিনিটে গাবতলী স্টেশনে যাত্রাবিরতির আগেই ট্রেনের ইঞ্জিনসহ তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়। রেলওয়ের সিগন্যাল বার্তা পেয়ে পদ্মরাগ এক্সপ্রেস ও করতোয়া এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি গাবতলী ও সুখানপুকুর স্টেশনে আটকে দেওয়া হয়।
দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের একজন যাত্রী রুয়েল মিঞা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রাতে সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা গাইবান্ধার বোনারপাড়াগামী ৪৯১ আপ লোকাল ‘কলেজ ট্রেনটি’তে অন্যদের সঙ্গে তিনিও সোনাতলা স্টেশনে যাচ্ছিলেন। রাত আনুমানিক পৌনে ৯টার দিকে ট্রেনটি গাবতলী স্টেশনে ১ নম্বর লাইন থেকে ২ নম্বর লাইনে প্রবেশের মুহূর্তেই আচমকা ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ সময় আতঙ্কে যাত্রীরা ট্রেন থেকে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন।
কলেজ ট্রেনে মহিমাগঞ্জ যাচ্ছিলেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের ছাত্র রোকন মাহমুদ। তিনি বলেন, রাত পৌনে নয়টা থেকে গাবতলী রেলস্টেশনে আটকে আছেন। কখন লাইন চালু হবে, কিছুই বুঝতে পারছেন না।
বগুড়া রেলস্টেশনের একটি সূত্র জানিয়েছে, রোববার কলেজ ট্রেনের লাইনচ্যুত ঘটনার পর গত এক মাসের পরিসংখ্যানে ঢাকা-সান্তাহার-লালমনিরহাট রেলপথে তিন দফা চলন্ত ট্রেনের বগি লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
এর আগে গত ২৫ জুন সকাল সকাল সাড়ে আটটায় বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সুখানপুকুর রেলস্টেশনের কাছে কলেজ ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় প্রায় তিন ঘণ্টা রেলযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
এ ছাড়া ২৯ মে বেলা পৌনে তিনটায় বগুড়ার সান্তাহার ছেড়ে আসা লালমনিরহাটগামী উত্তরবঙ্গ মেইল ট্রেনের একটি বগি কাহালু রেলস্টেশনের অদূরে লাইনচ্যুত হওয়ায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সব ধরনের রেল যোগাযোগ বন্ধ ছিল।