ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর পদবঞ্চিতদের হামলা, আত্মরক্ষায় নদীতে ঝাঁপ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মানচিত্র

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারও জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও তাঁর সহযোগীর ওপর সদ্য সাবেক কমিটির নেতারা হামলা করেছেন। এ সময় জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান তিতাস নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-বিজয়নগরের নবনির্মিত সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের শহরের শিমরাইলকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার জেরে গতকাল রাতে জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী এবং সাবেক সদস্যসচিব ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মহসিন মিয়াকে সংগঠনের সব পদ থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-বিজয়নগর উপজেলার মধ্যে নবনির্মিত সীমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া (শেখ হাসিনা) সড়কের তিতাস নদীর শিমরাইলকান্দি এলাকায় ঘুরতে যান নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান, ছাত্রদলের কর্মী মো. বিশালসহ আরও কয়েকজন। খবর পেয়ে সেখানে যান সদ্য সাবেক সদস্যসচিব মহসিন মিয়া। সেখানে তাঁদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে খবর পেয়ে সদ্য সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী দলবল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহিনসহ তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। আহ্বায়ক শাহিনুর একপর্যায়ে তিতাস নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মরক্ষা করেন। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা ছাত্রদল কর্মী বিশালকে পিটিয়ে আহত করেন পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। পরে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা তাঁদের উদ্ধার করেন। আহত বিশালকে চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জুন রাতে শাহিনুর রহমানকে আহ্বায়ক, সমীর চক্রবর্তীকে সদস্যসচিব ও পাঁচজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এর মধ্যে সমীর চক্রবর্তী আগের কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। নবগঠিত কমিটিতে পদ পাওয়া ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রহমান ওরফে সানির বড় ভাই কবির আহমেদ ভূঁইয়ার অনুসারী হিসেবে পরিচিত। কবির আহমেদ সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের বাসিন্দা। এর আগে ২০২২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন রুবেল চৌধুরী।

গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী এবং সাবেক সদস্যসচিব ও সদর উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মহসিন মিয়াকে ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ তাঁদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পরদিন গত ৯ জুন সকালে জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফের কান্দিপাড়ার বাসায় নতুন নেতাদের শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিষয়টি জানতে পেরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাবেক আহ্বায়ক রুবেল চৌধুরী ও সাবেক সদস্যসচিব মহসিন মিয়ার নেতৃত্বে সেখানে হামলা চালানো হয়। একই দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রুবেল চৌধুরীর নেতৃত্বে কান্দিপাড়ায় আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান এবং জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক পৌর কাউন্সিলর কাউসার মিয়ার বাড়িতে হামলা চালান ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতারা। পরদিন ১০ জুন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা সদস্যসচিব সমীর চক্রবর্তীর পাইকপাড়ার বাসা ঘেরাও করেন। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে ফুজায়েল চৌধুরীর নেতৃত্বে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কৃষক দল ও ছাত্রদলের নেতাদের বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় ২০ থেকে ২৫টি ককটেল বিস্ফোরণ, গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের খয়াসার-বিরাসার সড়ক এলাকায় গত ১২ জুন ছাত্রদলের দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়

এরপর আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে গত ১২ জুন বেলা ১১টার দিকে শহরের বিরাসার বাসস্ট্যান্ড এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে এবং খয়াসার-বিরাসার সড়ক এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে। একটি মামলায় ৩৫ জন, আরেকটি মামলায় ৪৯ এবং অন্য মামলায় ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গতকালের হামলার বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সদস্যসচিব মহসিন মিয়া বলেন, ‘শুক্রবার বিকেলে বেড়াতে গেলে শাহিন আমাদের ওপর হামলা করার চেষ্টা করেন। পরে আমরা আত্মরক্ষা করেছি।’

জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমরা তিন-চারজন নতুন সড়কে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানেক অবস্থান করার পর ফুজায়েল ও মহসিনের নেতৃত্বে পদবঞ্চিতরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাঁরা আমাকে মেরে পানিতে ফেলে দেয়। বিশালকে বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনায় রুবেল ও মহসিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। তবে সেখানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।