বগুড়ার মহাস্থান মাহীসওয়ার ডিগ্রি কলেজের পলাতক অধ্যক্ষ ও আওয়ামী লীগ নেতা মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে কলেজ তহবিল থেকে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাদী হয়ে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলা করেছেন।
মামুনুর রশিদ জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট গ্রামের বাসিন্দা। তিনি জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগ ও কালাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতাকে হত্যার অভিযোগে জয়পুরহাটে একাধিক হত্যা মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। আত্মগোপনে থাকাবস্থায় স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র পাঠানোর পর ১৮ আগস্ট থেকে মতিউর রহমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
মামলার এজাহার ও কলেজ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা থাকাবস্থায় সরকারি দলের প্রভাব বিস্তার করে মামুনুর রশিদ ২০২২ সালের ১৮ মে মহাস্থান মাহীসওয়ার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। তৎকালীন কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং বগুড়া-২ আসনের জাপার সাবেক সংসদ সদস্য শরিফুল ইসলাম জিন্নাহকে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে মামুনুর রশিদ অধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেন।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদানের পর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে মামুনুর রশিদ নানা দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কলেজ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ শুরু করেন। হয়রানিমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে শায়েস্তার হুমকি দেওয়ায় কেউ তাঁর এই অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর ৭ আগস্ট শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের বিচার চেয়ে কলেজে বিক্ষোভ করেন। পরে জয়পুরহাটে হত্যা মামলা হলে মামুনুর রশিদ আত্মগোপনে থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র পাঠান।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কলেজের কয়েকটি হিসাব নম্বর থেকে ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫ হাজার ৬৮১ টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে অর্ধকোটি টাকার বেশি অর্থ ভুয়া ভাউচারে উত্তোলন করে আত্মাসৎ করেছেন। অধ্যক্ষ সম্মান প্রথম বর্ষের ২৩ শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি বাবদ ১ লাখ ৬১ হাজার, তৃতীয় বর্ষের ৪০ জন শিক্ষার্থীর ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা, চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের ২ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা না করে পকেটে ভরেছেন। স্নাতক (সম্মান) শিক্ষার্থীদের ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬৮০ টাকা, ৬৫৪ জন শিক্ষার্থীর পরিচয়পত্র ও সোল্ডার ব্যাচ বানানো বাবদ ১ লাখ ১ হাজার ৪০ টাকা, ভর্তি বাতিল করা শিক্ষার্থীর ৮০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
অধ্যক্ষের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে কলেজ পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। এই কমিটি তাদের তদন্তে অধ্যক্ষ মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মামলার সুপারিশ করে।
মামলার বাদী ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, মামুনুর রশিদ অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকালে চলতি বছরে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই চাকরিচ্যুতিসহ হয়রানিমূলক মামলার হুমকিধমকি দিতেন তিনি। ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
কলেজ পরিচালনা পর্ষদের বর্তমান সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর শাহে আলম বলেন, মামুনুর রশিদ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও স্থানীয় অভিভাবকদের জনরোষ থেকে বাঁচতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে আত্মগোপন করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে কলেজ তহবিল থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।