নিজ খামারে কাজে ব্যস্ত রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার শাখাহাতীর চরে
নিজ খামারে কাজে ব্যস্ত রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার শাখাহাতীর চরে

চরাঞ্চলে গাড়লের খামার, মাসে আয় লাখ টাকা

গত এক বছরে খামার থেকে রফিকুল ইসলাম ৮০টির বেশি বাচ্চা গাড়ল পেয়েছেন। এগুলো বিক্রি করে পেয়েছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার দুর্গম চরে গাড়লের খামার গড়েছেন রফিকুল ইসলাম। দুই বছর আগে ৫২টি গাড়ল দিয়ে উপজেলার শাখাহাতীর চরে খামার শুরু করেন তিনি। বর্তমানে তাঁর খামারে ১৪২টি গাড়ল রয়েছে।

প্রাণী–বিশেষজ্ঞরা জানান, গাড়ল হলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাগপুর অঞ্চলের ছোট নাগপুরি জাতের ভেড়ার সঙ্গে দেশি ভেড়ার ক্রস ব্রিড। এগুলো দেখতে অনেকটা ভেড়ার মতো। তবে ওজন ভেড়ার দ্বিগুণ ও গঠনগত দিক থেকে ভেড়ার চেয়ে আলাদা। একটি গাড়ল আট-নয় মাস বয়সে প্রজননক্ষমতা অর্জন করে। শুরুতে একটি করে বাচ্চা দিলেও পরে দুটি করে বাচ্চা দেয়। এরা বছরে গড়ে দুবার বাচ্চা দেয়।

শাখাহাতীর দুর্গম বালুচরে রয়েছে চারণভূমি। সরেজমিন দেখা যায়, রফিকুল ইসলাম গাড়লকে চরিয়ে ঘাস খাওয়াচ্ছেন। পাশেই তাঁর বাড়ি। সেখানে এক বিঘা জমিতে তিনি উন্নত জাতের নেপিয়ার ঘাস লাগিয়েছেন। ঘাস লাগানো জমির পাশে খুঁটি দিয়ে চার ফুট উঁচু করে ২৬ হাত দৈর্ঘ্যের একটি টিনশেড ঘর। দিনের বেলায় চারণভূমিতে থাকে গাড়লগুলো। রাতে সেগুলো থাকে এই টিনশেড ঘরে।

রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। তখন তিনি দেশের বিভিন্ন খামার পরিদর্শন করেন। সেখান থেকেই তাঁর গাড়লের খামার করার পরিকল্পনা। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে গাড়লের খামারটি গড়েন। প্রথম দফায় ভারত থেকে ৫২টি গাড়ল নিয়ে আসেন। দ্বিতীয় দফায় আনেন আরও ৩৬টি। এরপর ৮৮টি গাড়ল নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু হয়। শুরুতে অধিকাংশ গাড়ল ছিল বাচ্চা। তিন-চার মাস পরে খামার থেকে আয় আসা শুরু হয়। এই খামার থেকে তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় গাড়লের বাচ্চা সরবরাহ করেছেন। এভাবে গাড়লের নয়টি খামার গড়ে উঠেছে।

পাঁচ মাস বয়সী একটি গাড়লের বাচ্চার দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। পূর্ণবয়স্ক একটি গাড়ল থেকে ৪০ থেকে ১০০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। গত এক বছরে খামার থেকে রফিকুল ইসলাম ৮০টির বেশি বাচ্চা গাড়ল পেয়েছেন। এগুলো বিক্রি করে পেয়েছেন ৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। তাঁর হিসাবে একটি খামারে ১০০টি গাড়ল পালন করলে বছরে অন্তত ৩০ লাখ আয় করা সম্ভব।

রফিকুল ইসলাম আরও জানান, কুড়িগ্রামের আবহাওয়া গাড়ল পালনের জন্য উপযোগী। এ ছাড়া গাড়লের রোগবালাই হয় না বললেই চলে। গাড়লের খাবার হিসেবে চারণভূমিতে যে ঘাস থাকে, সেটিই যথেষ্ট। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে কিছু নেপিয়ার ঘাস ও ভুট্টাদানা দেওয়া হয়।

শাখাহাতী চরের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘রফিকুল ইসলাম যখন প্রথমে গাড়লের খামার করেন, তখন আমরা সবাই তাঁকে বোকা ভেবেছিলাম। কারণ, এ অঞ্চলে আগে কেউ এ ধরনের খামার করেননি। ভেড়ার মতো দেখতে একটি বাচ্চা গাড়লের দাম ১০ হাজার টাকার বেশি। বছর যেতে না যেতেই তাঁর আয় দেখে এখন চরে অনেকে গাড়লের খামার করতে চাচ্ছেন।’

কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে গাড়ল পালন অত্যন্ত লাভজনক হবে বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোনাক্কা আলী। তিনি বলেন, গাড়ল মূলত ভেড়ার জাত। বাংলাদেশে প্রথম রাজশাহী অঞ্চলে গাড়লের পালন শুরু হয়। এখন কুড়িগ্রামে গাড়ল পালন হচ্ছে। জেলার ভূ-প্রকৃতি গাড়ল পালনের উপযোগী। গাড়লের মাংসের পরিমাণ বেশি। আমিষের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি এটি অর্থনৈতিকভাবেও লাভজনক। গাড়লের খামারিদের তাঁরা বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।