খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় এনজিও ফোরামের কার্যালয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়
খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় এনজিও ফোরামের কার্যালয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়

ক্যামেরার স্মৃতি ফিরিয়ে আনা এক প্রদর্শনী

বিভিন্ন জায়গা থেকে দুই শতাধিক ক্যামেরা সংগ্রহ করেছেন লুৎফর রহমান। এসব ক্যামেরার কোনো কোনোটির বয়স ১০০ বছরেরও বেশি। গত ৫০ বছরে প্রযুক্তির প্রভাবে ক্যামেরার কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে, তা তাঁর সংগ্রহশালা দেখলে সহজেই চোখে পড়ে।

জি কে এম লুৎফর রহমানের এসব ক্যামেরা নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো একটি প্রদর্শনী। তিনি ‘এনজিও ফোরাম’ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার খুলনার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক। গত রোববার খুলনা নগরের সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় এনজিও ফোরামের কার্যালয়ে এই প্রদর্শনী শুরু হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় শেষ হয় ওই প্রদর্শনী।

গত সোমবার বিকেলে প্রদর্শনীতে গিয়ে দেখা যায়, অ্যানালগ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ক্যামেরা রয়েছে। এ ছাড়া লেন্স, ষাটের দশকে ব্যবহৃত প্রজেক্টর, সিনেমা শুটিংয়ের ক্যামেরা ও ফিল্মও রয়েছে। রয়েছে ১৯২০ সালের তৈরি ক্যামেরাসহ দুর্লভ সব ক্যামেরা। প্রদর্শনীতে ১৫০টি মডেলের ২০০–এর বেশি ক্যামেরা স্থান পেয়েছে।

লুৎফর রহমান বিভিন্নভাবে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ক্যামেরা সংগ্রহ করেছেন। কোনোটি নিজে কিনেছেন, কোনোটি উপহার হিসেবে পেয়েছেন। আবার কেউ তাঁর ক্যামেরা সংগ্রহের ভান্ডার দেখে দান করেছেন। বিটিভির সাবেক প্রধান ক্যামেরাম্যান মাজহারুল ইসলাম তাঁর খালাতো ভাই। সেই ভাইয়ের কাছে থেকেই অনেক দুর্লভ ক্যামেরা পেয়েছেন তিনি। উপহার হিসেবে পাওয়া সেই ক্যামেরাগুলোই তাঁর সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করেছে বলে মনে করেন লুৎফর রহমান।

প্রদর্শনীতে ক্যামেরা হাতে লুৎফর রহমান

ক্যামেরা সংগ্রহের শুরুর কথা জানতে চাইলে লুৎফর রহমান বলেন, ‘চাকরিতে যোগদান করি ১৯৯৫ সালে। চাকরির সুবাদে বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে ঘুরতে হতো। তখন চোখে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় মানুষের ব্যবহৃত কুপির (কেরোসিন দিয়ে জ্বালানো বাতি) ধরন ভিন্ন। এরপর মনে হয়, একসময় তো এসব কুপি পাওয়া যাবে না। মানুষের মন থেকেও হারিয়ে যাবে পুরোনো এ ঐতিহ্য। ক্যামেরার ব্যাপারটিও একই। সেই চিন্তা থেকেই ১৯৯৭ সাল থেকে ক্যামেরা সংগ্রহ শুরু করি। এখনো সংগ্রহ করছি। কোথাও কোনো পুরোনো ক্যামেরা পেলেই তা নিজের কাছে নেওয়ার চেষ্টা করি।’

লুৎফর রহমান আরও বলেন, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে ছবি তোলায়। নব্বইয়ের দশকে ব্যবহৃত ফিল্ম ক্যামেরাও বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিস্ময়কর। ক্যামেরাগুলো মানুষের কাছে প্রদর্শনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো বর্তমান প্রজন্মকে আগের প্রজন্মের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া। আর আগের প্রজন্মের সামনে তাঁদের সময়ে ব্যবহৃত ক্যামেরার স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়া।

রয়েছে শত বছরের পুরোনো ক্যামেরা
উনিশ শতকের শেষের দিকে ফটোগ্রাফিক ফিল্ম ব্যবহার করে ক্যামেরায় ছবি তোলা শুরু হয়। ওই সময়ের কোনো ক্যামেরা লুৎফর রহমানের কাছে নেই। লুৎফর রহমান জানান, ১৯২০ সালের তৈরি একটি ক্যামেরা তাঁর কাছে রয়েছে। ‘করনেল’ ব্রান্ডের ক্যামেরাটি আমেরিকান কোম্পানি জার্মানির সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করে ইউরোপের বাজারে ছেড়েছিল। একই কোম্পানি ১৯৩২ সালে তৈরি করে ‘পেঙ্গুইন’ ব্র্যান্ডের আরেকটি ক্যামেরা।

লুৎফর রহমান বলেন, ক্যামেরা উদ্ভাবনের প্রথম দিকে কেউ চাইলেই তা ব্যবহার করতে পারতেন না। শুধু সরকারি কর্মকর্তা, উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, ধনী পরিবার, সংবাদপত্র ও স্টুডিওর মালিকেরা ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি পেতেন। সরকারের কাছ থেকে ওই অনুমতি নিতে হতো।

লুৎফর রহমানের বাড়ি যশোর শহরে। এলাকার মানুষ তাঁকে লল্টু নামে চেনে। ওই নামে নিজ বাড়িতে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছেন। সেখানে ক্যামেরার পাশাপাশি অন্য জিনিসপত্রও রয়েছে। সেখানে রয়েছে এ পর্যন্ত ব্যবহৃত সব ধরনের টেলিফোন সেট, দেশের ৬৪ উপজেলা থেকে প্রকাশিত সব আঞ্চলিক পত্রিকার একটি করে কপি, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত সব ডাকটিকিট, বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিকস, তৈজসপত্র ও গ্রামোফোন (কলের গান)। প্রতি শুক্র ও শনিবার ওই বাড়িতে গিয়ে সবাই সংগ্রহশালাটি দেখতে পারেন।

লুৎফর রহমান বলেন, বাংলাদেশে অনেক সংগ্রাহক আছেন। সরকারিভাবে একটি দিনকে শখের সংগ্রাহক দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এ ছাড়া সরকারিভাবে সংগ্রাহকদের জন্য বিশেষ পুরস্কার ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি।