রংপুর বিভাগীয় পাঠাগার সম্মেলন

‘মানবিক সমাজ গড়তে পাঠাগারগুলোকে জাগাতে হবে’

সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিষদের আয়োজনে রংপুর বিভাগীয় পাঠাগার সম্মেলন। শনিবার সকালে নগরের পাবলিক লাইব্রেরি হলরুমে
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশকে একটি মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে পাঠাগার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। মানবিক সমাজ গড়তে পাঠাগারগুলোকে জাগাতে হবে। পাঠাগারের বই পাঠ কর্মসূচি বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জ্ঞানবিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার প্রসার ঘটাতে হবে। আঞ্চলিক লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণেও পাঠাগারগুলো ভূমিকা রাখতে পারে।

আজ শনিবার সকালে রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরি হলরুমে সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের আয়োজনে রংপুর বিভাগীয় পাঠাগার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের আলোচনায় এসব কথা উঠে এসেছে। একই সঙ্গে পাঠাগারগুলোর পাঠক–সংকট, অবকাঠামো, আর্থিক সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যা নিরসনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবিও উঠেছে।

এই সম্মেলনে রংপুরের আট জেলার অর্ধশত বেসরকারি পাঠাগারের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সম্মেলনের প্রথম পর্বে সভাপতিত্ব করেন রংপুরের পায়রাবন্দের বেগম রোকেয়া স্মৃতি পাঠাগারের সভাপতি রফিকুল ইসলাম। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন পাঠাগার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রহমান রায়হান।

সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে বিকেলে ‘নদী ও প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় পাঠাগারের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনার হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী–গবেষক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বলেন, অতীতের নদী ও প্রাণপ্রকৃতির সন্ধান পেতে পাঠাগারমুখী হওয়া জরুরি। তেমনি বর্তমান অবস্থা বোঝার জন্যও পাঠাগার গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বসবাস উপযোগী পৃথিবী দিতে, নদী ও প্রাণপ্রকৃতির পাঠ দিতে পাঠাগার ভূমিকা রাখবে।

সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহ আলম, চলচ্চিত্রকার ও স্থপতি মসিহউদ্দিন শাকের, অধ্যাপক শাশ্বত ভট্টাচার্য, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফি খান, নাট্যকার সরকার হায়দার, কাজী এমদাদুল হক প্রমুখ।

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘পাঠাগারের সংকট উত্তরণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাঠাগার রক্ষা করে গেলে পরিবেশ সুরক্ষার কাজও এগিয়ে যাবে। আমরা যদি সমাজের সচেতন মানুষ বাড়াতে চাই, তাহলে অবশ্যই বই পড়তে হবে, পাঠাগারে যেতে হবে।’

মসিহউদ্দিন শাকের বই পড়া তাঁকে চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল বলে জানান। অধ্যাপক শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, মেধা ও মননের জায়গায় উৎকর্ষ অর্জনে প্রাণপ্রকৃতি ও পাঠাগারের সম্পর্ক গভীর। পাঠের মধ্য দিয়ে নদী, প্রাণপ্রকৃতির বোধ তৈরি করে দিতে পারে পাঠাগার।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শফি খান বলেন, নদীর ইতিহাস জানতে হলে নদীর কাছে যেতে হবে, নদীর ইতিহাস পড়তে হবে। নদীর ইতিহাস ও ইউনিয়ন পর্যায়ের ইতিহাস লেখা আবশ্যক। পাঠাগার এই কাজটা করতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত পাঠাগার আন্দোলনের সভাপতি আবদুস সাত্তার খান স্থানীয় নদ-নদী ও জলাশয় রক্ষায় পাঠাগারকর্মীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।