অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে পটুয়াখালীর আদালতে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আশিষ রায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।
দণ্ডবিধির ৩০৭/৪৯৯/৫০৬ (৪) ধারায় হাসান মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব মধুখালী গ্রামের বাসিন্দা। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে মো. মাসুম বিল্লাহ (৪০) নামের এক ব্যক্তিকে। তাঁর বাড়িও পূর্ব মধুখালী গ্রামে। মাসুম বিল্লাহ পাল্টা অভিযোগ করেছেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তাঁকে ফাঁসাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মো. মাসুম বিল্লাহ রেলওয়ের কমলাপুর স্টেশনের একজন পয়েন্টসম্যান। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সময় নিউজ ডট টিভি এবং ঢাকা নিউজের শেয়ার করা ভিডিও দেখে মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘আপনাকে দেখে মনে হয় আমেরিকার দালাল’। এমন মন্তব্যে মামলার বাদী হাসান মাহমুদ ভীষণ কষ্ট পেয়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, মাসুম বিল্লাহ এলাকায় এসে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘সুদখোর, ইহুদি, পশ্চিমা দালাল’ বলে মানহানিমূলক উক্তি করেছেন। সর্বোপরি মাসুম বিল্লাহ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘একাকী পাইলে গুলি করিয়া হত্যা করার’ হুমকিও দিয়েছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার বিষয়ে হাসান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের ১৮ কোটি মানুষের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। দেশ-বিদেশে তাঁর সুনাম-খ্যাতি রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের গর্ব, আমাদের অহংকার। আসামি মাসুম বিল্লাহ কুরুচিপূর্ণ ভাষায় বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মানহানি করেছেন। এতে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে বিবাদী মাসুম বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, মূলত এলাকার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আয়া পদের চাকরি নিয়ে হাসান মাহমুদের পরিবারের সঙ্গে তাঁর বিরোধ রয়েছে। যে কারণে হাসান এখন তাঁর বিরুদ্ধে লেগেছেন। যে ইস্যু নিয়ে মামলা করা হয়েছে, তা মোটেই সত্য নয়। এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যে ফেসবুক আইডি দিয়ে বিভিন্ন মন্তব্য করার কথা বলা হচ্ছে, সেটা তাঁর নামের আইডি হলেও তিনি তা চালান না বলে দাবি করেছেন।
বাদীর আইনজীবী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মাসুম বিল্লাহ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো বিশ্ববরেণ্য একজন মানুষকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানহানিকর-অপদস্তমূলক আচরণ করায় ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০৭/৪৯৯/৫০৬ (৪) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহমেদ বলেন, ‘আদালতের কাগজ এখনো হাতে পাইনি। এ–সংক্রান্ত আদেশ হাতে পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’