আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে যারা চেষ্টা করবে, ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সমুচিত জবাব দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক (ভিপি নুর)। তিনি বলেছেন, এই গণ অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো জায়গা নেই। আওয়ামী লীগের দোসর যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কোনো জায়গা হবে না।
‘গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মরণ এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে’ গণ অধিকার পরিষদের রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে নুরুল হক এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে জেলা ও মহানগর গণ অধিকার পরিষদ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দুঃশাসনের অবসান হয়েছে। কিন্তু সারা দেশে এখনো আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে যাঁরা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে, তাদের আস্ফালন থামেনি। এই রংপুরের মাটিতেও গণ অধিকারের নেতাদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে, কটূক্তি করা হয়েছে। আজকের এই সমাবেশ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
ঢাকায় জাতীয় পার্টির (জাপা) কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ২ নভেম্বর রংপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন দলটির নেতা-কর্মীরা। সেই সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের নেতাদের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন জাপার নেতারা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ নভেম্বর রংপুরে সংবাদ সম্মেলন করে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক সম্পর্কে কটূক্তিমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার জন্য জাপার নেতাদের ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।
আজ বিকেলে রংপুর জিলা স্কুলে গণ অধিকার পরিষদের বিভাগীয় সমাবেশের সময় নগরের সেন্ট্রাল রোডে দলীয় কার্যালয়ের সামনে কর্মী সমাবেশ করে জাপা। পৃথক স্থানে একই সময়ে দুটি দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে নানা আলোচনার মধ্যে নুরুল হক আজ বক্তব্য দেন। জাপার নাম না নিয়ে নুরুল হক বলেন, ‘যারা আস্ফালন দেখাচ্ছে, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করব, এই গণহত্যাকারী ও গণহত্যাকারীর দোসরদের গ্রেপ্তার করে রংপুরসহ সারা দেশের মানুষকে স্বস্তি দেন।’
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই পরিবর্তনকে স্থায়ী করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে গণ অধিকার পরিষদ সময় দেবে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, ‘আমরা এই সরকারকে স্থিতিশীল করতে চাই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করতে চাই। গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে গণ আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে ভাবতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কারের আগে নির্বাচন দিলে জনগণের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না।’
রংপুরের ৪৭ শতাংশ মানুষ দরিদ্র উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, রংপুরে একটি ভালো চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান নেই। একটি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে পুরো অঞ্চল পূর্ণতা পায় না। অথচ বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে কৃষিতে সমৃদ্ধ এলাকা রংপুর। কাজেই কৃষিকে গুরুত্ব দিয়ে রংপুরকে কৃষিতে হাব তৈরি করে নতুন শিল্পনীতি ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা প্রয়োজন। পিছিয়ে পড়া রংপুরকে গণ অধিকার পরিষদ এগিয়ে নিতে চায় বলে দাবি করেন তিনি।
সমাবেশে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জাতীয় পার্টিকে ‘জাতীয় বেইমান পার্টি’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি মনে করে রংপুর তাদের ঘাঁটি। আমরা বলতে চাই, রংপুরের মানুষ এই জাতীয় বেইমান পার্টিকে বয়কট করেছে। এই জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে ফ্যাসিজম কায়েম করেছে। সুতরাং রংপুরের মাটিতে জাতীয় পার্টির জায়গা হবে না।’
জেলা গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শেরে খোদা আসাদুল্লাহর সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য হানিফ খান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা প্রমুখ বক্তব্য দেন। অন্য বক্তারাও জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর উল্লেখ করে তাদের কঠোর সমালোচনা ও বিচার দাবি করেন।