সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা

এ দুই ওয়ার্ডের অনেক সড়কে সড়কবাতি জ্বলে না। এ ছাড়া মশার উপদ্রবে লোকজন অতিষ্ঠ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মজুমদার পাড়া এলাকার প্রধান সড়কের এক পাশ দেবে গেছে। গত মঙ্গলবার দুপুরে

শ্রমজীবী নুরুল ইসলাম (৫৫) দাঁড়িয়ে ছিলেন সিলেট নগরের কানিশাইল প্রত্যাশা এলাকার ২ নম্বর সড়কের সামনে। আর কিছুটা এগোলেই তাঁর বাসা। গত সোমবার রাত নয়টার দিকে বাসায় যাওয়ার পথে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। এলাকার বড় সমস্যাগুলো কী কী, জানতে চাইলে নুরুল বলেন, কানিশাইল এলাকার পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। সামান্য বৃষ্টি হলেই নালা উপচে পানি সড়কে এসে জমে। বাসাবাড়িতেও পানি ঢোকে। নালা-নর্দমার আবর্জনাও নিয়মিত অপসারণ করা হয় না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের এলাকাগুলো হচ্ছে ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, মোল্লাপাড়া, নবাব রোড, ওয়াপদা, মোকাম বাড়ি, বেতবাজার, ডহর, কানিশাইল ও ঘাইপাড়া। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, প্রতিটি এলাকাতেই মশার উপদ্রব রয়েছে। তবে মশকনিধনে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয় না।

ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ রাস্তায় সড়কবাতি জ্বলে না। ফলে সন্ধ্যার পর থেকেই এলাকাগুলো অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে চলাচলে মানুষদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটি এলাকায়ই আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। মজুমদারপাড়া, ঘাসিটুলা, বেতবাজার, হিয়াবরণ মোল্লাপাড়া এলাকাগুলো সুরমা নদীর পারেই অবস্থিত। এসব এলাকায় নদীর পারে আবর্জনার স্তূপ জমেছে। সারাক্ষণ সেখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। 

কানিশাইল এলাকার বাসিন্দা আবদুল কালাম পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি বলেন, মাসখানেক ধরে এলাকার একটি সড়কবাতিও জ্বলছে না। মশার উপদ্রবে বসবাস করা তাঁদের দায় হয়ে পড়েছে।

মজুমদারপাড়া এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী জসিম উদ্দিন (৩০) জানান, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় আড়াই সপ্তাহ আগে এলাকার মূল সড়কের অংশবিশেষ দেবে গেছে। এতে সড়কটি দিয়ে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। 

এলাকার লোকজন আরও বলেন, শামীমবাদ ৩ নম্বর রোড এবং ঘাসিটুলা লামাপাড়া এলাকার সড়ক দুটি বেহাল। কানিশাইল রোডে নর্দমা প্রশস্তকরণের কাজ ধীর গতিতে চলায় দুর্ভোগ বেড়েছে। কানিশাইল, প্রত্যাশা, ঘাসিটুলা, বেতবাজার, কুষ্ঠ হাসপাতালের সম্মুখভাগ, কলাপাড়া নবাবরোড ও ঘাসিটুলা লামাপাড়া এলাকায় সড়কবাতি বিকল থাকায় জ্বলছে না।

এসব বিষয়ে কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন বলেন, ওয়ার্ডটি দিয়ে ৩৩ কেভি (কিলো ভোল্ট) শক্তিসম্পন্ন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দক্ষিণ সুরমায় গিয়েছে। এর প্রভাবে প্রায়ই সড়কবাতিগুলো বিকল হয়ে পড়ে। এটা সমাধানের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া মশকনিধনে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হয়। 

কাউন্সিলর আরও বলেন, মজুমদারপাড়া এলাকার সড়কটি সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওয়ার্ডের বেশির ভাগ নালা-নর্দমা প্রশস্তকরণ করা হচ্ছে। এলাকার মানুষজন নদীর পাড়ে দেদারসে ময়লা ফেলছেন। তবে আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ওয়ার্ডে অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে। বাসিন্দাদের দুর্ভোগ অনেকটা এখন কমেছে। 

বখাটেদের আড্ডা ও জুয়ার আসর

নগরের নরসিং টিলা এলাকায় পানির সংকট লেগে থাকে। গ্রাহকদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের সরবরাহ করা সুপেয় পানি তাঁরা চাহিদামতো পাচ্ছেন না। এলাকার বাসিন্দা ফারুক আহমদ চৌধুরীর (৪২) বলেন, এলাকায় প্রায়ই চুরি-ছিনতাই হয়। মোড়ে বসে বখাটেদের আড্ডা। এ ছাড়া অনলাইনভিত্তিক জুয়ায় আসক্ত অনেকে। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে আরও পড়েছে আখালিয়া, বাগবাড়ি, খুলিয়াপাড়া, কানিশাইল, মদিনামার্কেট, নেহারিপাড়া, পাঠানটুলা ও সাগরদীঘিরপাড়। এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কে সড়কবাতি জ্বলছে না। যত্রতত্র পড়ে আছে পরিত্যক্ত কাগজ, পলিথিন। বেশ কিছু নালা-নর্দমা আবর্জনায় ঠাসা। সরু গলির কারণে ঠিকমতো অনেক মহল্লার ভেতরে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। 

একাধিক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরদীঘিরপাড় এলাকাটি তুলনামূলকভাবে নির্জন হওয়ায় প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। পাঠানটুলা ও মদিনামার্কেট এলাকায় যানজটের সমস্যা আছে। 

গত সোমবার রাতে সরেজমিনে দেখা গেছে, নরসিং টিলা ও এতিম স্কুল রোডে কোনো সড়কবাতি জ্বলছে না। এতিম স্কুল রোড এলাকার ব্যবসায়ী নাজমুল হাসান (৩৯) জানান, ঈদের পরদিন বজ্রপাতে সড়কবাতির সুইচ নষ্ট হয়। এর পর থেকে বাতিগুলো আর জ্বলছে না। 

মখলিছুর রহমান ও তারেক উদ্দিন

মো. মখলিছুর রহমান ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পর্যন্ত তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সিটি করপোরেশনের পানি শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, নরসিং টিলায় পানির সংকট আছে কি না, তা দেখা হবে। 

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ বলেন, মোবাইলে জুয়া খেলা হয়। ফলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, এটা শনাক্ত করা কিছুটা কঠিন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ওই সব এলাকায় পুলিশের নিয়মিত টহল থাকে। 

ওয়ার্ডের সচিব পিন্টু আহমদ জানান, লোডশেডিংয়ের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে নরসিং টিলা এলাকায় পানি সরবরাহে কিছুটা সমস্যা ছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে। ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা আছে। তবে ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পানি নেমে যায়। আর ঝড়-তুফানের কারণে সড়কবাতিও মাঝেমধ্যে বিকল হয়ে পড়ে। তবে তা দ্রুতই সারিয়ে নেওয়া হয়। ময়লা-আবর্জনাও নিয়মিত অপসারণ করা হয়ে থাকে।

সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. মখলিছুর রহমান বলেন, নরসিং টিলা এলাকায় পানির সমস্যা সমাধানে একটি প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ কাজ শেষ হলেই পানির সমস্যা মিটে যাবে। এ এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যাও দূর করা হয়েছে। সাগরদিঘির পাড় এলাকাটি তুলনামূলকভাবে নির্জন হওয়ায় এখানে প্রায়ই ছিনতাই হয়। তবে সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।

কাউন্সিলর আরও বলেন, ঝড়বৃষ্টির কারণে প্রায়ই সড়কবাতি বিকল হয়ে পড়ে। তবে তা দ্রুত ঠিক করে নেওয়া হয়। ওয়ার্ডটিকে গোছালো ও পরিচ্ছন্ন রাখতে সব ধরনের কার্যকর উদ্যোগ সব সময় নেওয়া হয়।