মাগুরায় এক শিশুশিক্ষার্থীকে (৭) যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এক মাদ্রাসাশিক্ষককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) গ্রাম আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সদর উপজেলার শত্রুজিৎপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ওই সালিসে টাকা দিয়ে ওই মীমাংসা হয়। এর আগের দিন বুধবার বিকেলে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেণির এক শিশুকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে—এমন অভিযোগে ওই সালিস আহ্বান করা হয়। পুলিশ বলছে, খবর পেয়ে ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের কাছে গেলেও তাঁদের পক্ষ থেকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করা হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত্রুজিৎপুর ইউনিয়নে ওই মাদ্রাসায় বুধবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। তাঁরা শুনেছেন, ওই দিন বিকেলে বৃষ্টি হচ্ছিল, তাই তিনটি শিশু ক্লাস শেষে আটকা পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল করিম একটি শিশুকে যৌন নিপীড়ন করেন। তবে শিশুরা চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে যান। পরদিন সকালে শত্রুজিৎপুর ইউপি কার্যালয়ে এ বিষয়ে সালিস হয়। সেখানে দুই পক্ষকে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন মিলে মীমাংসা করেন। যেখানে অভিযুক্ত শিক্ষককে এক লাখ টাকা ভুক্তভোগী পক্ষকে ‘ক্ষতিপূরণ’ দিতে বলা হয়। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষক সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। সালিসে আপাতত মাদ্রাসাটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
মেয়ের অভিভাবকদের সঙ্গে আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসেছিলাম। মীমাংসা সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই শিক্ষককে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে শিশুটির পরিবারকে।ওসমান গনি, ইউপি চেয়ারম্যান, শত্রুজিৎপুর
অভিযুক্ত শিক্ষক আবদুল করিম অবশ্য দাবি করেছেন, যৌন নিপীড়নের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আজ শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে তিন-চারটি মেয়ে পড়ে গিয়েছিল। ওরা একসঙ্গেই ছিল। অথচ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, আমি নাকি মেয়েটির গায়ে হাত দিয়েছি। আমি বলেছি যদি প্রমাণ হয়, তাহলে যেকোনো শাস্তি মেনে নেব। তৃতীয় একটি পক্ষ মাদ্রাসাটিকে বন্ধ করে দিতে চায়। তারাই চাপ দিয়ে এসব করেছে।’
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী শিশুর বাবা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুক্রবার তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, যা হয়েছে মুরব্বিরা বসে ঠিক করেছেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চান না।
এ ঘটনার খবর পেয়ে ভুক্তভোগী শিশুর বাড়িতে গিয়েছিলেন শত্রুজিৎপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুজ্জামান। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে জানান, বুধবার রাতে তিনি খবর পেয়ে শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানে শিশুর বাবার কাছে তিনি ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। এ সময় মেয়েটির বাবা জানান, তাঁর মেয়ের সঙ্গে শারীরিক কিছু হয়নি। তিনি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করতে চান না। পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি মেয়েটি কোথায় আছে জানতে চাই। তখন তাঁরা বলেন সে ঘুমিয়ে আছে। কোনো অভিযোগ থাকলে পরে জানাবেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ মৌখিক বা লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি।’
সালিস মীমাংসার বিষয়ে জানতে চাইলে শত্রুজিৎপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওসমান গনি বিষয়টি স্বীকার করেন। শুক্রবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের কোনো ঘটনা না এটা। মেয়ের অভিভাবকদের সঙ্গে আমরা এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসেছিলাম। সমাধান হয়ে গেছে।’ কী ঘটনায় কী সমাধান হয়েছে, জানতে চাইলে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘হুজুর (অভিযুক্ত শিক্ষক) বলেছে, সে ওই বাচ্চাকে আদর করে একটা চুমু দেছে। এতটুকু। প্রশাসনের লোকজনও গিছিল। মেয়ের বাবার কোনো অভিযোগ নেই।’ তিনি জানান, মীমাংসা সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই শিক্ষককে এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে শিশুটির পরিবারকে।
তবে আইনজীবীরা বলছেন, যৌন নিপীড়নমূলক অপরাধের বিচার বাংলাদেশ দণ্ডবিধি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ফৌজদারি আদালতে করতে হবে। গ্রাম আদালতে এ ধরনের ঘটনার বিচার করার সুযোগ নেই।