ইজতেমা মাঠে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় রাত কাটালেন মুসল্লিরা

ইজতেমা মাঠে জায়গা খালি নেই। তাই নিরুপায় হয়ে অনেকেই সড়কের পাশে অবস্থান নিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকা–আশুলিয়া মহাসড়কের কামাড়পাড়া এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসেছেন আবদুল হাকিম। বয়স ৭০ ছুঁই-ছুঁই। বয়সের ভারে চলাফেরা করতে কষ্ট হয় তাঁর। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৮ সদস্যের একটি তাবলিগ জামাতের সঙ্গে টঙ্গীতে পৌঁছান আবদুল হাকিম। তবে মানুষের ভিড়ে মাঠের ভেতরে ঢুকতে পারেননি। একপর্যায়ে দলছুট হয়ে যান। এদিক-সেদিক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যেই রাত নেমে আসে। উপায় না পেয়ে রাতে অবস্থান নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাটা গেট এলাকায়।

দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আবদুল হাকিমের সঙ্গে দেখা হলো। আবদুল হাকিমের সঙ্গে ছিল পাতলা কম্বল, চটের বিছানা আর একটি বালিশ। সাথিদের পাওয়ার আশা ছেড়ে তিনি শুয়ে পড়েছেন সড়কের পাশের একটি ফাঁকা জায়গায়। তবে পৌষের ঠান্ডা বাতাস আর ঘন কুয়াশায় তাঁর ঘুম হচ্ছিল না।

আবদুল হাকিমের মতো এমন অসংখ্য মুসল্লি ইজতেমা মাঠের ভেতর জায়গা না পেয়ে ইজতেমা মাঠের আশপাশের সড়ক-মহাসড়কে রাত কাটিয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। তবে গতকাল দুপুরের মধ্যেই কানায় কানায় ভরে যায় ইজতেমা মাঠ। তাই দূরদূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য মুসল্লিদের মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হচ্ছে। দিনের বেলা কোনোরকমে পার হলেও রাতে তাঁদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

তবে এসব ভোগান্তির বিষয়ে আবদুল হাকিমের কোনো অভিযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘দ্বীনের কাজে এলে একটু কষ্ট তো হইবোই। ভেতরে জায়গা পেলে এ সমস্যা হইত না। তিন বছর পর ইজতেমা। তাই এবার প্রচুর মানুষ হইছে। মানুষের ভিড়ে হাঁটাও যায় না। মানুষের ভিড়ে কখন যে সবাইকে হারায় ফেলছি, টেরই পাই নাই। সন্ধ্যা থেইক্যাই অনেক খুঁজছি। কিন্তু পাই নাই। পরে বাধ্য হইয়ায় রাস্তায় শুইয়া পড়ছি।’

কামারপাড়া সড়কের ফুটপাতে দেখা হলো কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর থেকে আসা মো. খুরশিদ আলমের (৬০) সঙ্গে। তিনিও এসেছেন তাবলিগ জামাতের সাথি হয়ে। কিন্তু তাঁরা মাঠে ভেতরে প্রবেশের আগেই তাঁদের জায়গা দখল হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা সবাই ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন। শীতের মধ্যেই পাতলা কাগজের বিছানা পেতে শুয়ে পড়েছেন সবাই।

কামাড়পাড়া সেতুর পাশে শীতে জবুথবু হয়ে বসে আছেন এক বৃদ্ধ

খুরশিদ আলম বলেন, ‘রাস্তার যানজটের কারণে আমাদের আসতে একটু দেরি হইছে। কিন্তু আমরা আসার আগেই আমাদের জায়গা দখল হইয়্যা গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করছি একটু ভালো জায়গার জন্য। কিন্তু সবখানে মানুষ। হেললাইগ্যা পরে সবাই ফুটপাতে শুইয়া পড়ছি।’

গতকাল রাত দেড়টা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠের আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়ক-মহাসড়কের পাশে অনেকেই কম্বল-কাঁথামুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েছেন। মাঠে জায়গা না পেয়ে অনেকেই তখন রাত কাটানোর জন্য জায়গা খুঁজছিলেন। কেউ কেউ দলছুট হয়ে ঘোরাঘুরি করছেন এদিক-সেদিক।

রাজধানীর উত্তরার রানাভোলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে তাঁবু টানিয়ে অবস্থান করছেন অসংখ্য মুসল্লি। অনেকে আবার ঢাকা-আশুলিয়া সড়কের পাশের ঢালু জায়গায় বিছানা পেতে শুয়ে আছেন। এর মধ্যে যানবাহনের শব্দ, সড়কের ধুলা ছড়িয়ে পড়ছে তাঁদের ওপর।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে আসা শামসুর রহমান বলেন, গতকাল রাতেই তাঁরা ইজতেমা এলাকায় পৌঁছেছেন। কিন্তু তখন মাঠের ভেতরে ঢোকার মতো পরিস্থিতি ছিল না। তাই সড়কের ঢালু জায়গায় চট বিছিয়ে রাত যাপন করেছেন।

সড়কের পাশে তাঁবু টানিয়ে ঘুমাচ্ছেন একদল মুসল্লি। গতকাল রাতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাটা গেট এলাকায়

তাবলিগ জামাতের বিরোধের কারণে এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের ইজতেমা শুরু হয়েছে আজ থেকে। তাঁদের ইজতেমা চলবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। আর সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা করবেন জানুয়ারির ২০, ২১ ও ২২ তারিখ।

জানতে চাইলে জুবায়ের অনুসারীদের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি খন্দকার মেজবাহ উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার আমাদের প্রচুর সাথি এসেছেন। পুরো মাঠ কানায় কানায় ভরা। এ জন্য অনেকেই মাঠে জায়গা না পেয়ে বাইরে কষ্ট করে অবস্থান করছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি রেখেছি, আশপাশের মসজিদগুলো যেন খুলে দেওয়া হয়। তাহলে আমাদের সাথিদের কষ্ট একটু কম হবে।’