রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যে বালিশ খেলা বন্ধ চায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), এমন মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
আজ শনিবার দুপুরে বগুড়ার শহীদ টিটু মিলনায়তনে জাসদের রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, একবার মুক্তিযুদ্ধের সরকার, আরেকবার রাজাকারের সরকার। রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ শক্তির বালিশ খেলা বন্ধ চায় জাসদ। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হয় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালের পর সামরিক শাসক জিয়া-এরশাদ ক্ষমতায় এসে রাজাকারদের পুনর্বাসন করেন। এরপর চলে ক্ষমতার পালাবদলের খেলা। কখনো স্বাধীনতার পক্ষের দল, কখনো রাজাকারের দল। জাসদ ক্ষমতার এই বালিশ খেলা চায় না। দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতির স্বার্থেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির নেতৃত্বে বর্তমান সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় দেখতে চায়।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪–দলীয় জোটে থাকার ঘোষণা দিয়ে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ঝড়ঝঞ্ঝা এলে মাঝনদীতে নৌকার মাঝি পাল্টানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মাঝি ঠিক রেখেই আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে রাজাকারমুক্ত করার লড়াই চালিয়ে যাব। একা লড়াই করে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। অতীতেও সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেনি জাসদ। আগামী দিনেও করবে না। ঐক্যবদ্ধ থাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে পরাজিত করে আমরা সরকার গঠন করেছি। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও রাজাকার তোষণকারী বিএনপির ক্ষমতা দখলের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিতে আগামী নির্বাচনেও আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে থেকেই আমরা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।’
হাসানুল হক আরও বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলনের নামে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা চলছে। তারা দেশকে আবারও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এ ছাড়া বাজার সিন্ডিকেট কারসাজিতে জড়িত একটি চক্র জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। লুটেরা দল রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ ও গুন্ডাবাজি করে দেশকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।
জাসদ সভাপতি বলেন, জনজীবনে সংকট মোকাবিলার জাদুর কাঠি বিএনপি-জামায়াতের হাতে নেই। বিএনপি-জামায়াত চক্রকে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র বানচাল করার পাশাপাশি দুর্নীতি, লুটপাট ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। দুর্ভোগ লাঘবে বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারী লুটেরাদের উৎখাত করতে হবে। বৈশ্বিক সংকট ও বিপর্যস্ত দেশীয় অর্থনীতি রক্ষা করতে হবে। সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিনিধি সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, জাসদ ১৯৭২ সাল থেকেই সমাজতন্ত্রের পথে আছে। ৫০ বছর ধরে জাসদ কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
জেলা জাসদের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল লতিফের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল হাই তালুকদার, সফি উদ্দিন মোল্লা, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শ্যামল কুমার রায়, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুজ্জামান বাদশা, জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম, রোকনুজ্জামান, ওবায়দুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। প্রতিনিধি সভায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলার হাজারো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।