মেহেরপুরের তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গত সোমবার রাত পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিতে মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার ৩৩টির বেশি গ্রাম ও ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়েছে। মাছের পুকুর, আউশ ও আমন ধান, ক্ষীরা ও কাঁচা মরিচের খেত প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় সূত্র ও কৃষকেরা বলছেন, পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া ও খনন না করায় নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার চান্দবীল, আমঝুপি, বারাদি, শ্যামপুর, কালাচান্দপুর, আশরাফপুর, গাংনী উপজেলার বামুন্দী, কাজীপুর, তেঁতুলবাড়িয়া, হেমায়াতপুর, মটমুড়া, ষোলটাকা, জোড়পুকুর, মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান, কেদারগঞ্জ ও শিবপুর এলাকায় পানি বেড়েছে।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার মেহেরপুরে ৬৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। এরপর গতকাল বেলা ১১টায় সর্বশেষ বৃষ্টি রেকর্ড করা হয় ৮৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বৃষ্টি ১ থেকে ১০ মিলিমিটার হলে সেটিকে হালকা বৃষ্টিপাত বলা হয়। ১১ থেকে ২২ মিলিমিটারের মধ্যে হলে তা মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত। আর ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটারের বৃষ্টি হচ্ছে ভারী বৃষ্টি। যদি ৮৮ মিলিমিটারের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়, তবে তা অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে ধরা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় ২০ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ হয়েছে। অন্যদিকে উচ্চফলনশীল ক্ষীরার চাষ হয়েছে আট হাজার হেক্টর জমিতে। আর কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ ধান, ৩ হাজার হেক্টরে ক্ষীরা ও ৬ হাজার হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ পানিতে তলিয়ে রয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামের বাসিন্দা মিয়া আক্কাস বলেন, টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ক্ষীরার খেত পানিতে ডুবে গেছে। খেতের বাঁশের মাচা ভেঙে পড়েছে।
গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় সবচেয়ে বেশি কাঁচা মরিচের চাষ হয়ে থাকে। ওই এলাকার প্রান্তিক কৃষক হাফেজদ্দিন মিয়া প্রথম আলোকে জানান, এই কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও বাতাসে কাঁচা মরিচের গাছের গোড়া আলগা হয়ে গেছে। এতে বেশির ভাগ কাঁচা মরিচের গাছ মাটিতে হেলে পড়েছে। চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঁচা মরিচ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না।
ঝোড়ো বাতাসে বৈদ্যুতিক তারের ওপরে হেলে পড়েছে সড়কের গাছ। এতে পুরো জেলার বেশির ভাগ এলাকা শুক্রবার থেকে বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিদ্যুৎ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মেহেরপুর কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক স্বদেশ কুমার ঘোষ বলেন, মেহেরপুর জেলায় বিদ্যুতের কোনো সমস্যা ছিল না। হঠাৎ নিম্নচাপের কারণে সড়কের পাশে দুর্বল গাছ বিদ্যুতের তারের ওপরে হেলে পড়েছে। কর্মীরা ২৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে এবং বাকি এলাকায় দ্রুত বৈদ্যুতিক লাইন চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না তাঁরা। বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট হয়ে পড়েছে ফাঁকা। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কাজেই বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কার্যত অচল অবস্থা বিরাজ করছে জনজীবনে। বঙ্গোপসাগরের গভীর স্থল নিম্নচাপ ও মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে মেহেরপুর জেলাসহ খুলনা বিভাগের সব জেলায় বৃষ্টি ও ঝড় হচ্ছে বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার।
সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর বলেন, চার দিন ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় মুঠোফোন চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসক শামীম হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে কৃষি অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করার জন্য। সেই হিসাবে তাঁদের সরকারি সহায়তা করা হবে। অন্যদিকে ওএমএসের কম দামের চাল বিতরণ চলমান। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য সব স্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।