অব্যবহৃত পড়ে আছে ফায়ার হাইড্রেন্ট। চট্টগ্রাম নগরের টেকনিক্যাল মোড়ে
অব্যবহৃত পড়ে আছে ফায়ার হাইড্রেন্ট। চট্টগ্রাম নগরের টেকনিক্যাল মোড়ে

কাজে আসছে না ৪ কোটি টাকার ফায়ার হাইড্রেন্ট

চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন স্থানে বসানো ১৭৪টি হাইড্রেন্ট ব্যবহার করে না ফায়ার সার্ভিস।

চট্টগ্রাম নগরে আগুন নেভাতে পানির উৎস হিসেবে ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করেছিল ওয়াসা। ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা খরচ করে এসব হাইড্রেন্ট বসানো হয়। কিন্তু আগুন নেভাতে একটিও ব্যবহার করছে না ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে অগ্নিকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম নগরেও বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এরপর কোটি টাকা খরচ করে বসানো ফায়ার হাইড্রেন্টের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।

ফায়ার হাইড্রেন্ট বা অগ্নিনির্বাপণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ পানিকল ব্যবহার করা নিয়ে দুই সরকারি সংস্থা দুই রকম বক্তব্য দিচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, হাইড্রেন্টে পানির চাপ কম। এগুলো ব্যবহার করতে ন্যূনতম ৪ থেকে ৭ বার (পানির চাপ মাপার পরিমাপক) বা ৪০ থেকে ৭০ মিটার উঁচুতে তোলার পানির চাপ প্রয়োজন। কিন্তু হাইড্রেন্টে পানির চাপ আছে একবার। এতে টেনেটুনে ১০ মিটার ওপরে ওঠানো সম্ভব। অন্যদিকে হাইড্রেন্টের সঙ্গে হোসপাইপ সংযুক্ত করার ব্যবস্থা রাখা হয়নি। হাইড্রেন্টের সঙ্গে পাইপ সংযুক্ত করতে যে অ্যাডাপ্টর লাগবে, সেটিও নেই।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, হাইড্রেন্ট বসানোর আগে ওয়াসার পক্ষ থেকে কারিগরি সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। বসানোর প্রক্রিয়া যথাযথ হয়নি। পানির চাপ না থাকা ও পাইপ লাগানোর ব্যবস্থা না রাখার কারণে এগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। অ্যাডাপ্টর কেনার পেছনে ব্যয়ের সুযোগও ফায়ার সার্ভিসের নেই।

অন্যদিকে ওয়াসা বলছে, ২০১৬ সালে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে নগরে শুরুতে ৩০টি ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে ও কয়েক দফা আলোচনা করে এসব হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছিল। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সংস্থার কর্মকর্তারা কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় পরে আরও ১৪৪টি হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, দেশের কোনো শহরে ফায়ার হাইড্রেন্ট নেই। ওয়াসা চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো হাইড্রেন্ট বসিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাইড্রেন্টের নমুনা নিয়ে এসব স্থাপন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মতামত নিয়ে এসব কাজ করা হয়। ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন শেষ হওয়ার পরও গত বছর ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে ১০টি সভা করেছে। এরপর ফায়ার সার্ভিস হাইড্রেন্ট কেন ব্যবহার করছে না, তা জানা নেই।

অ্যাডাপ্টর না থাকা ও পানির চাপ কম থাকার বিষয়ে মাকসুদ আলম বলেন, একটি অ্যাডাপ্টর তৈরি করতে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হবে। এটি ফায়ার সার্ভিসকেই করতে হবে। আর পানির চাপ চারবার দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ফায়ার সার্ভিসের নিজেদের পাম্প রয়েছে। তারা পাম্প ব্যবহার করে চাপ বাড়াতে পারে, যা করে সংস্থাটি এখনো বিভিন্ন উৎস থেকে পানি নিয়ে অগ্নিনির্বাপণ করে আসছে।

এদিকে নগরে পানি উৎস কমে আসায় অগ্নিকাণ্ডের ক্ষতি বাড়ছে বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, চট্টগ্রাম জেলায় গত পাঁচ বছরে ছোট-বড় মিলিয়ে ৭ হাজার ১১১টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

দুই সংস্থার সমন্বয়ের অভাবে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওয়াসার উদ্যোগটি ভালো উদাহরণ হতে পারত। সেটি হয়নি। হাইড্রেন্ট বসানোর আগেই কারিগরি বিষয়গুলো সুরাহা করা উচিত ছিল। এখন আর দেরি না করে দুই সংস্থাকে একসঙ্গে বসে হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে।