মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ–মনোনীত প্রার্থীর এক সমর্থককে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২দিকে উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের মুন্সিকান্দি গ্রামে গুলির এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম ডালিম সরকার (৩৫)। তিনি মুন্সিকান্দি গ্রামের নুর হোসেন সরকারের ছেলে। আসনটির স্বতন্ত্র প্রার্থীর (কাঁচি) সমর্থক ও মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ছোট ভাই সিপন হোসেনের নেতৃত্বে এ গুলির ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাস। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। তিনি দুবার এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ ফয়সাল কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। তাঁর বাবা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন। ফয়সাল দুবার মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন।
প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আসনটিতে এ দুটি পক্ষের মধ্যে হামলা, সংঘর্ষ, গুলি, প্রচার ক্যাম্প ভাঙচুরের অন্তত ১৮টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জে পাঁচটি এবং গজারিয়ায় ৪টি মামলা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পর ডালিম সরকারকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মুন্সিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্দার খায়রুল হাসান। পরিবারের দাবি, অনেক আগে থেকে ডালিমদের সঙ্গে হত্যাকারীদের বিরোধ ছিল। তবে রাজনৈতিক লোকজন বলছেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ১২টার দিকে মুন্সিকান্দি গ্রামে নৌকার প্রচার ক্যাম্পের পাশে অবস্থান করছিলেন ডালিম, সোহেলসহ কয়েকজন। এ সময় কাঁচি প্রতীকের সমর্থক ইউপির চেয়ারম্যান রিপন হোসেনের ভাই সিপন ও সোহাগের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল নৌকার ক্যাম্পে হামলা করে। পরে পাশে গিয়ে ডালিমকে গালিগালাজ করতে থাকে। সেখানে সোহেলকে পেটাতে শুরু করেন হামলাকারীরা। একপর্যায়ে ডালিম ও সোহেলকে লক্ষ্য করে শটগান দিয়ে গুলি চালানো হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হন ডালিম। তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।
মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, রাত দেড়টার দিকে আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ডালিম নামের এক ব্যক্তির বাঁ পাঁজর গুলিবিদ্ধ ছিল। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মোল্লাকান্দি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহাসিনা হক বলেন, ‘রিপনরা কাঁচির সমর্থক। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে কয়েক দিন ধরে চেয়ারম্যান রিপন হোসেন ও আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ খাঁ বিভিন্ন এলাকা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করেছে। তাদের লোক দিয়ে এলাকায় ঝামেলা তৈরি করছিল। গতকাল রাতে রিপনের ভাই সিপনরা নৌকার ক্যাম্পে হামলা চালাল। একজনকে গুলি করে মারল। আমরা এই ঘটনার বিচার চাইছি।’
এ বিষয়ে ইউপির চেয়ারম্যান রিপন হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তার ভাই সিপন হোসেনও এলাকাছাড়া।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থান্দার খায়রুল হাসান বলেন, ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। যাঁরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।