৫ বছর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলাকারী সেই অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি স্কুলে গতকাল বিকেলে সিটি করপোরেশনের ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিয়াজুল সভাপতি নির্বাচিত হন। নিয়াজুল আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে নিয়াজুল সভাপতি মনোনীত হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নেতৃত্বে নগর ভবন থেকে পদযাত্রা বের হয়। পদযাত্রাটি চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে এলে শামীম ওসমানের সমর্থক ও হকাররা মেয়রের ওপর হামলা চালান। সেখানে নিয়াজুল ও শাহ নিজামকে অস্ত্র নিয়ে গুলি করতে দেখা যায়। আইভীর সমর্থকেরা মানবঢাল তৈরি করে তাঁকে রক্ষা করেন। এ ঘটনার পাঁচদিন পর আইভীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নিয়াজুলসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে যান সিটি করপোরেশনের আইন কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার। কিন্তু সে সময় পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর মামলা নেয় পুলিশ।
গত বছরের ২৩ নভেম্বর মেয়র আইভীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় অস্ত্রধারী নিয়াজুল ইসলাম, শাহ্ নিজামসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে অভিযোগপত্র থেকে অস্ত্র আইনের দুটি ধারা বাদ ও এজাহারনামীয় ৫ আসামিকে অব্যাহতি দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। চলতি বছরের গত ২৯ জানুয়ারি অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির দিন নারাজি দেন মামলার বাদী আবদুস সাত্তার। আদালত আগামী ১ মার্চ নারাজি আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী তাঁর মামলা থেকে নিয়াজুল ও শাহ নিজামের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের দুটি ধারা বাদ ও এজাহারনামীয় ৫ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি মামলার তদন্তের নারাজি দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা অস্ত্র আইনের ধারা দুটি বাদ দিয়েছেন।
এদিকে গতকালের সম্মেলনে ১১ নম্বর ওয়ার্ডে সভাপতি পদে একাধিক নাম থাকায় কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি। ওই ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয় জসীম উদ্দিনকে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন জাহাঙ্গীর আলম। ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও প্রধান বক্তা ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা।
অনুষ্ঠানে খোকন সাহা বলেন, নিয়াজুল বিএনপি সরকারের আমলে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০০০ সালে বিএনপি সরকারের আমলে তাঁর ভাই নজরুল ইসলামকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, নিয়াজুল যোগ্য। এ কারণে তাঁর হাতে ১২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদটি তুলে দেওয়া হলো।
এ বিষয়ে আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নিয়াজুলের প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হয়েছেন। দলীয় মেয়রের ওপর হামলার মামলার আসামি সভাপতি মনোনীত হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইখানের পরিবেশ এমন ছিল যে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী পাওয়া যায়নি।
এদিকে নিয়াজুল সভাপতি মনোনীত হওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, নিয়াজুলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চানমারী বস্তি নিয়ন্ত্রণ, এলজিইডির ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া তিনি ১৯৮৮ সালে কামাল ও কালাম জোড়া খুনের মামলার আসামি।