ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে ফেনী সদর উপজেলার রত্নগর ইউনিয়নের ফুল পূর্ব সুলতানপুর গ্রামে
ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে ফেনী সদর উপজেলার রত্নগর ইউনিয়নের ফুল পূর্ব সুলতানপুর গ্রামে

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদ উদ্‌যাপন

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ রোববার দেশের বিভিন্ন এলাকায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হচ্ছে। সকালে মুসল্লিরা জামাতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। পরে তাঁরা পশু কোরবানির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

চাঁদপুর
চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে আজ ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। সকাল আটটা থেকে নয়টার মধ্যে ঈদের নামাজ শেষে পশু কোরবানি করা হয়।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, প্রতাপুর, বাসারা, ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নুরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর, মতলব উত্তর উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী এবং কচুয়া ও শাহরাস্তি উপজেলার কিছু গ্রামের একশ্রেণির মুসল্লি ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করছেন।

হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফের পীর হিসেবে পরিচিত আবু ইয়াহিয়া মো. জাকারিয়া আল মাদানি বলেন, ১৯২৮ সাল থেকে শুরু করে দীর্ঘ ৯৬ বছর ধরে সৌদি আরবের অনুকরণে রোজা ও দুই ঈদ উদ্‌যাপন করে আসছেন তাঁরা। আর চাঁদপুরে এই রীতি চালু করেন তাঁর বাবা প্রয়াত মাওলানা ইসহাক। তিনি আরও বলেন, সাদ্রা দরবার শরিফে আজ সকাল সাড়ে আটটায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। একই সময় সাদ্রা মাদ্রাসা মাঠে পৃথক আরেকটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলার টোরামুন্সিরহাট বাজার জামে মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে ঈদের জামাত হয়েছে।

এদিকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মুসল্লি ঈদ উদ্‌যাপন করছেন। স্থানীয় পাঁচানি গ্রামের আবদুর রব ও মাথাভাঙ্গা গ্রামের খলিলুর রহমান বলেন, হজ পালনের দিনে ঈদ উৎসব করতে পেরে তাঁরা খুবই খুশি। প্রায় ৬০ বছর ধরে এভাবে তাঁরা ঈদ উৎসব উদ্‌যাপন করছেন।

চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করা হয়েছে

ফেনী

ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি পাড়ায় ও পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়ার ছয়ঘরিয়া এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করা হয়েছে।

সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে তাঁরা পশু কোরবানি করেছেন।

পরশুরাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন খান বলেন, পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়ার ছয়ঘরিয়া এলাকায় কয়েক বছর থেকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর মীর হোসেনের নেতৃত্বে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি করা হচ্ছে।

ফেনী জেলায় আজ তিনটি স্থানে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. দীন মোহাম্মদ।

নোয়াখালী

নোয়াখালীর মসজিদসহ ছয়টি স্থানে মুসল্লিরা ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেছেন। স্থানগুলো হলো সদর উপজেলার পশ্চিম সাহাপুর খান্দানে কাদেরী তরিকায়ে আবুল উলাইয়ী গোলামে জাহাঁগিরী দায়রা শরিফ, সুলতানপুর রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরিফ, হযরত শাহ মোহাম্মদ রশীদিয়া আল কাদিরিয়া দায়রা শরিফ, বেগমগঞ্জের বসন্তবাগ পোদ্দার বাড়ি জামে মসজিদ ও জিরতলী মসজিদ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বসন্তবাগ গ্রামের ঈদের জামাতে ৩০০ থেকে ৩৫০ জন মুসল্লি, সুলতানপুর রশিদিয়া রহিমিয়া দরবার শরীফের জামাতে ১৫ থেকে ২০ জন মুসল্লি, সাহাপুর খান্দানে কাদেরী তরিকায়ে আবুল উলাইয়ী গোলামে জাহাঁগিরী দায়রা শরীফের জামাতে ১০-১২ জন মুসল্লি ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।

বেগমগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ারুল ইসলাম ও সুধারাম থানার ওসি মীর জাহেদুল হক জানান, দুটি থানার আওতাধীন ছয়টি স্থানে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার তিন শতাধিক মানুষ ঈদ উদ্‌যাপন করছেন। সদর উপজেলার দেবীনগর ইউনিয়নের মোমিন টোল ও বাগানপাড়া এলাকায় ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। শিবগঞ্জের বিনোদপুর ইউনিয়নের ছিয়াত্তরবিঘি এলাকায় আমবাগানে শতাধিক লোক ঈদের নামাজ আদায় করেন।

চট্টগ্রাম

দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ, বারখাইন, বরুমচড়া, খাসখামা, কাটাখালী ও রায়পুর এবং বাঁশখালী উপজেলার কালিপুর, চাম্বল, ডোংরা, শেখেরখীল, ছনুয়া, পুইছড়ি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঈদ উদ্‌যাপনের বিষয়ে মির্জাখীল দরবার শরিফের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মোহাম্মদ মছউদুর রহমান বলেন, হানাফি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে দুই শতাধিক বছর ধরে তাঁরা সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদ্‌যাপন করে আসছেন। এবারও তাঁর ব্যতিক্রম হয়নি।

দিনাজপুর

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার দুটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকালে সাড়ে সাতটায় উপজেলার বিনাইল ইউনিয়নের আয়ড়া বাজার জামে মসজিদে ইমাম ইলিয়াস আলী ও সকাল পৌনে আটটায় জোতবানী ইউনিয়নের খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে ইমাম দেলোয়ার হোসেন কাজী ঈদের নামাজ পড়ান।

আয়ড়া বাজার জামে মসজিদের জামাতে ছয়টি গ্রাম থেকে ৩৭ পুরুষ ও ১১ নারী অংশ নেন। খয়েরবাড়-মির্জাপুর পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের জামাতে সাতটি গ্রাম থেকে ৫০ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারী অংশ নেন।

বিরামপুর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার বলেন, দুটি স্থানেই সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিরামপুর উপজেলার খয়েরবাড়ি-মির্জাপুর গ্রামের পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। রোববার সকালে

পটুয়াখালী

পটুয়াখালীর অন্তত ২২টি গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার ঈদ উদ্‌যাপন করছে। সকাল নয়টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে পটুয়াখালীর সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের বদরপুর দরবার শরিফে। ঈদের জামাতের ইমামতি করেন দরবার শরিফের ইমাম মাওলানা শফিকুল ইসলাম গণি।

নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। পরে দরবার শরিফ মাঠে পশু কোরবানি করা হয়েছে।

বদরপুর দরবার শরিফের পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুস সায়াদাত আখন্দ বলেন, সদর উপজেলার বদরপুর ও ছোট বিঘাই, গলাচিপা উপজেলার সেনের হাওলা, পশুরীবুনিয়া, নিজ হাওলা ও কানকুনি পাড়া, বাউফল উপজেলার মদনপুরা, শাপলাখালী, বগা, ধাউরাভাঙ্গা, সুরদী, সাবুপুরা, ও আমিরাবাদ এবং কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, নিশানবাড়িয়া, মরিচবুনিয়া, উত্তর লালুয়া, মাঝিবাড়ি, টিয়াখালীর ইটবাড়িয়া, পৌরশহরের নাইয়াপট্টি, বাদুরতলী, মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের সাফাখালী এই ২২ গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার ঈদ উদ্‌যাপন করছে।

কলাপাড়া

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সাতটি গ্রামের ১০ হাজার মানুষ ঈদ উদ্‌যাপন করছেন। ‘চানটুপির’লোক হিসেবে পরিচিত এসব মানুষ প্রতিবছরই এক দিন আগে ঈদ উদ্‌যাপন করে থাকেন।

কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের উত্তর নিশানবাড়িয়া জাহাগিরিয়া শাহ্সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফ প্রাঙ্গণে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া কলাপাড়া পৌর শহরের নাইয়াপট্টি, ধানখালী, চম্পাপুর, লালুয়া, উত্তর লালুয়া মাঝি বাড়ি, লতাচাপলি ও ফুলতলী বাজারে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ফরিদপুর

ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা  উপজেলার ১৩টি গ্রামের অন্তত তিন সহস্রাধিক মানুষ ঈদ উদ্‌যাপন করছেন। বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রূপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়, সহস্রাইল, মাইটকুমড়া, ভুলবাড়িয়া, রাখালতলী, বারাংকুলা, দড়ি সহস্রাইল এবং আলফাডাঙ্গা উপজেলার ইছাপাশা ও শুকুরহাটা গ্রামের মুসল্লিরা ঈদের নামাজে অংশ নেন।

আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মাহিদুল হক বলেন, পূর্বপুরুষ থেকে তাঁরা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার মির্জাখিল পীরের তরিকাপ্রাপ্ত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার হযরত ইয়াছিন আলী (রহ.) পীরের অনুসারী। যাঁরা মির্জাখিল পীরের অনুসারী তাঁরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে থাকেন। সব মিলিয়ে হাজার তিনেক মানুষ, যাঁরা চট্টগ্রাম পীরের অনুসারী। তাঁরা আজ ঈদ উদ্‌যাপন করছেন।

শেরপুর

শেরপুরের তিনটি উপজেলার চারটি গ্রামে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো শেরপুর সদর উপজেলার বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখারচর মধ্যপশ্চিমপাড়া ও উত্তরপাড়া, নকলা উপজেলার চরকৈয়া এবং নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী পশ্চিমপাড়া। এ চার গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ ঈদের জামাতে অংশ নেন।

বেতমারী ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন বলেন, চরখারচর উত্তরপাড়া দশানী নদীর পাড়ে ও চরখারচর মধ্যপশ্চিমপাড়া খানকা শরিফে প্রায় ৭০০ মানুষ ঈদের নামাজ আদায় করেন। এসব গ্রামের মানুষ দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদ্‌যাপন করে আসছেন। তাঁরা ফরিদপুরের সুরেশ্বর পীরের অনুসারী।

ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার সকালে শেরপুরের নকলা উপজেলার চরকৈয়া গ্রামে

গাইবান্ধা

গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা কয়েকটি গ্রামের কিছু মুসল্লি ঈদ উদ্‌যাপন করছেন। উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ার জামে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজে ইমামতি ও খুৎবা পাঠ করেন মশিউর রহমান।

পলাশবাড়ী উপজেলার হরিপুর গ্রামের যুবক রেজওয়ান আকন্দ বলেন, নয় বছর ধরে তাঁরা এভাবে ঈদ উদ্‌যাপন করছেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম মোকছেদ চৌধুরী বলেন, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দীর্ঘদিন থেকে তাঁরা ঈদ্‌ উদ্‌যাপন করছেন।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, নোয়াখালী; প্রতিনিধি, চাঁদপুর, ফেনী, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম), বিরামপুর (দিনাজপুর), মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর), কলাপাড়া (পটুয়াখালী), পটুয়াখালী, শেরপুর ও গাইবান্ধা)