রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাস্তিপ্রাপ্ত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জনই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী

শৃঙ্খলার পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৩২ জনকে শাস্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক ও বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক আছেন। বাকি সাতজন শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি।

কোন কোন অপরাধে তাঁদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর নাম ও পরিচয় প্রকাশ করেছে।

এর আগে গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা, র‌্যাগিং, নিপীড়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের ধরন ও মাত্রাভেদে ৬ জনকে স্থায়ী বহিষ্কার (তবে ছাত্রত্ব না থাকলে সনদ বাতিল), ৫ জনকে ২ বছরের জন্য বহিষ্কার, ৪ জনকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার, ২ জনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার, ১ জনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, ১ জনকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১৩ জনের আবাসিক সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা উপকমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ১২ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৫তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কৃত ছয়জনই নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ, বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু), সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার রায় ও হলের ‘দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা’ মিশকাত হাসান। তবে তাঁদের মধ্যে ফয়সাল আহমেদ ও আসাদুল্লা-হিল-গালিব ‘ড্রপআউট’ হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন।

দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে পাঁচজনকে। তাঁদের মধ্যে চারজনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী ছিলেন। তাঁরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম, নবাব আবদুল লতিফ হলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা, ছাত্রলীগের কর্মী আবদুল্লাহ আত তাসরিফ ও মুজাহিদ আল হাসান। এ ছাড়া আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামকেও দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

এক বছরের জন্য বহিষ্কৃত চারজনের তিনজনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁরা হলেন রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলফি শাহরিন আরিয়ানা, মাদার বখ্শ হলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কিশোর পাল ও ছাত্রলীগের কর্মী জারিফা আহনাফ (ইলমা)। অপর শিক্ষার্থী হলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আহসানুল হক (মিলন)।

ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে ছাত্রলীগের কর্মী আনিকা আলম ও মরিয়ম আক্তারকে। এ ছাড়া ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তর বিশ্বাসকে। একই বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হোসেন নাবিলকে পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে ১৩ শিক্ষার্থীর হলের আবাসিক সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১০ জনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তাঁরা হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তাজরীন আহমেদ খান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশা খাতুন ও নবনীতা বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নুসরাত জাহান, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা সম্পাদক নূর-ই-জান্নাত, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারিনা জামান, সহসম্পাদক লিমা খাতুন, উপপ্রচার সম্পাদক বাবলি আক্তার, দপ্তর সম্পাদক জাফরিন খান ও সাংগঠনিক সম্পাদক রাইতাহ ইসলাম। এ ছাড়া চারুকলা অনুষদের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বাবলী ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের কাজী উর্বি ইয়াসমিন এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আফরিদা বিনতে ইকবালের আবাসিক সুবিধা বাতিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ একটি রাজনৈতিক দলের। তবে তাঁদের রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি, বরং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এ জায়গায় বার্তা থাকবে, ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে দলমত–নির্বিশেষে শাস্তি পেতে হবে।