পুলিশের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে যাওয়ার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি বলেছেন, তিনি এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাঁর নাম মোল্যা নজরুল ইসলাম (গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার), গোটা পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে নয়।
গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শনিবার রাতে শহরের তেলিপাড়া এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন এই চিত্রনায়িকা। এ সময় তাঁর আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই দেশে একজন পুলিশ কমিশনার একটা অন্যায় করে পার পেয়ে যেতে পারবেন না। আমি সব সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে জানাতে চাই, আমি কিন্তু পুলিশ বাহিনিকে নিয়ে কথা বলি নাই। আমার অনেক পুলিশের সঙ্গে পরিচয় আছে। অনেক ফোর্সের প্রধানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁরা অনেক নাইস। আমি শুধু একজন ব্যক্তির কথা বলছি বারবার, যিনি মোল্যা নজরুল। আমি তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমি কিন্তু পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে যাইনি।’
লাইভে যাওয়ার প্রসঙ্গে এই চিত্রনায়িকা বলেন, ‘লাইভে মানুষ কখন যায়, যখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। আমাদের শো-রুমটা দখল হয়ে যাচ্ছিল। ফেসবুকে যে ভিডিওটা আপলোড করেছি, তাতে আছে, লাঠি–পাইপ নিয়ে আমাদের শোরুমে আসছে দখলের উদ্দেশ্যে।’
সংবাদ সম্মেলনে মাহিয়া মাহি বলেন, ‘আমি লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে বলে ভুল করেছি। একজন পুলিশ কমিশনার আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে রিপ্রেজেন্ট করে। তাই আমার লাইভে বলাতে পুরো বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসনকে বিতর্কিত করেছে হয়তো। আমি সেটার জন্য দুঃখিত, আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আমি যে দেড় কোটি টাকার কথা বলেছি, সেটা অবশ্যই তদন্ত হবে। আমি ন্যায়বিচারের জন্য সবার কাছে যাব।’
গ্রেপ্তার ও কারাগারে যাওয়া ঘটনা বর্ণনা করে এই চিত্রনায়িকা বলেন, ‘আমাকে এয়ারপোর্টের ইমিগ্রেশন পুলিশ থেকে শুরু করে গাজীপুরের পুলিশ কারাগারে দিয়েছে—এ পর্যন্ত আমার অভিজ্ঞতা অনেক খারাপ। তারা আমাকে যেভাবে ট্রিট করেছে তাতে মনে হয়েছে, আমি একজন যুদ্ধাপরাধী। হ্যাঁ, আমি একটা লাইভ করেছি, আমি একজনের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, সে ডিজিটাল আইনে মামলা করেছে। কিন্তু আমি তো কোনো রাষ্ট্রদ্রোহী নই। আমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। আমাকে গাড়িতে নেওয়ার সময় ওয়্যারলেসেও কথা বলছিলেন না পুলিশ সদস্যরা। গাড়িতে আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আমি পানি চেয়েছিলাম, তাঁরা আমাকে পানিও দিয়েছেন এক ঘণ্টা পর।’
এর আগে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা মামলায় বিমানবন্দর এলাকা থেকে মাহিয়া মাহিকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মহানগর পুলিশ। এরপর দুপুরে গাজীপুর আদালতে নিয়ে তাঁর সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালতের বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মাহিয়া মাহির আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
গ্রেপ্তারের আট ঘণ্টা ও কারাগারে যাওয়ার প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান মাহিয়া মাহি।
মাহিয়া মাহির আইনজীবী আনোয়ার সাদত সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই সময় (দুপুরে) মাহিয়া মাহির জামিন চাওয়া হয়নি। এখন আমরা তাঁর জামিন চাইলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। পরে তাঁর জামিনের কাগজপত্র কারাগারে নিয়ে যাই। তা যাচাই-বাছাই শেষে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।’
এর আগে দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকালে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরলে বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই ফ্লাইটে তাঁর স্বামীর দেশে আসার কথা থাকলেও তিনি পালিয়ে থাকার জন্য সৌদি আরবে রয়ে গেছেন।