চট্টগ্রামে শিশুদের মধ্যে দাঁত ও মুখগহ্বরের যত্ন নিয়ে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। এ কারণে শিশুরা দাঁতের ক্ষয়রোগ, মাড়ির ব্যথাসহ নানা রোগে ভোগে। এখানে শিশু–কিশোরদের দাঁতের ক্ষয়রোগের হার উন্নত দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
২৩৫ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ওপর চালানো এক জরিপ সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু দাঁতের ক্ষয় রোগে ভুগছে। ‘চট্টগ্রাম শহরের একটি নির্দিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শ্রেণির শিশুদের মুখগহ্বরের স্বাস্থ্যের অবস্থা পরিলক্ষণ সমীক্ষা’ শিরোনমে এই সমীক্ষাটি করেছে চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের ডেন্টাল পাবলিক হেলথ বিভাগ।
সমীক্ষা কাজে অংশ নেওয়া কলেজটির ইন্টার্ন চিকিৎসক আকিলা চৌধুরী বলেন, শহরের অল্প কিছু শিক্ষার্থীর ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। এতে করে পুরো শহরের শিশুদের দাঁতের যত্নের চিত্র কোনোভাবে উঠে আসবে না। কিন্তু এটাকে ভিত্তি ধরে আরও বড় আকারে সমীক্ষা চালানোর সুযোগ থাকবে। আর শহরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামের শিশুদের দাঁতের যত্ন অনেক ভিন্ন হবে।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ২৩৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্ষয়প্রাপ্ত দাঁত ছিল ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশের। ২৩ দশমিক ৮ শতাংশের কিছু দাঁত নেই। দাঁতের ক্ষয়ের কারণে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ তাদের দাঁত ফিলিং (মেরামত) করেছে।
২০২২ সালের নভেম্বরে ২৩৫ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে প্রশ্নত্তোরের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এর পরের বছর সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষায় ২৩৫ জন প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫১ দশমিক ৫০ ছাত্র। আবার শিক্ষার্থীদের ১২৩ জন তৃতীয় শ্রেণির এবং ১১২ জন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, ৭৬ জন (৩২ শতংশ) দাঁতের ব্যথায় ভুগছিল। ৬১ জনের (২৬শতাংশ) দাঁতের সংবেদনশীলতা ছিল, ৫১ জনের (২২ শতাংশ) মাড়ির রক্তক্ষরণ হয়, ৪৬ জনের (২০ শতাংশ) ভাঙা দাঁত এবং ৩৭ জনের (১৬ শতাংশ) দাঁত নড়বড়ে ছিল।
সমীক্ষায় দেখা যায়, ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী ব্রাশ ও টুথপেস্ট ব্যবহার করেছিল। শুধু কিছু শিক্ষার্থী দাঁত ব্রাশ করার উপাদান হিসেবে কয়লা ব্যবহার করেছিল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই (৮৮ শতাংশ) সকালে নাশতার আগে দাঁতব্রাশ করেছে। বাকিরা সকালের নাশতার পর দাঁত ব্রাশ করেছে। ১৩৪ জন শিক্ষার্থী রাতে খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করেনি।
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল ডেন্টাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সবাই শহরের বাসিন্দা। অভিভাবকদের অনেকেও শিশুদের দাঁতের যত্ন নিয়ে অসচেতন। প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিভিন্ন ধরনের দাঁতের সমস্যায় ভুগছে। তাদের মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য ভালো নয়। এই অবস্থার উন্নতির জন্য আরও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে।