মাথার ওপর সূর্য। চৈত্রের দুপুরে প্রখর রোদ। এর মধ্যেই হাসছে সূর্যমুখী ফুল। খেত পরিচর্যা করছেন কৃষক আবদুল কাইয়ুম (৪২)। কাজের ফাঁকে তিনি বললেন, জমিতে এলেই সূর্যমুখীর হাসিটা চোখে পড়ে। মনটা ভরে যায়। গরমের মধ্যেই কাজ করছি। ফসল তো ঘরে তুলতে হবে।
কৃষক কাইয়ুমের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর গ্রামে। গতকাল বুধবার তাঁর সঙ্গে কথা হয়। আবদুল কাইয়ুম আগে ধানের চাষ করতেন। মাছ চাষও করেছেন। কোনোটাতেই তেমন লাভবান হননি। এ বছর তিনি চার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। একই জমিতে সাথি ফসল হিসেবে রয়েছে ভুট্টা, পাট, শসা, মিষ্টিকুমড়া, গোল আলু, লালশাক, লাউ, বাক্স কচু ও পাতাকপি।
সাদুল্যাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের সাদুল্যাপুরের গ্রাম। সাদুল্যাপুর-ধাপেরহাট রোড ঘেঁষে কৃষক কাইয়ুমের সূর্যমুখী ফুলের জমি। গতকাল বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, জমিজুড়ে শোভা পাচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। ভেতরে দাঁড়িয়ে ভুট্টার গাছ। উঁকি দিচ্ছে মিষ্টিকুমড়া ও বড় জাতের কচু।
কাইয়ুম বলেন, কয়েক দিন আগে উঠেছে গোল আলু, লালশাক, লাউ ও পাতাকপি। চলিত মাসেই সূর্যমুখী ঘরে তুলবেন। চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৬১ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত আলুসহ সবজি বিক্রি করেন ৩৫ হাজার টাকা। সাথি ফসলসহ সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি করতে পারবেন ২ লাখ টাকা।
২০০৯ সালে আবদুল কাইয়ুম সাদুল্যাপুর গ্রামে চার বিঘা জমি লিজ নেন। প্রতিবছর ২০ মণ ধানের মূল্য ধরে টাকা দেওয়ার চুক্তি হয়। এ পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ ১৪ বছর হয়েছে। কৃষক আবদুল কাইয়ুম বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজের দাম ২০০ টাকা। চার বিঘায় উৎপাদন হবে ২০-২৫ মণ। এ হিসাবে অন্তত দুই লাখ টাকার সূর্যমুখীর বীজ বিক্রি হবে। সাথি ফসল বিক্রি করেও লাভ হবে।
উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় স্থানীয় বাজার ও দেশের বিভিন্ন জেলায় এ বীজ বিক্রি হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে জমি নিড়ানি ও স্প্রে মেশিন দরকার। টাকার অভাবে কিনতে পারছেন না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মতিউল আলম বলেন, উপজেলায় ৯০ বিঘা জমিতে বপনের জন্য প্রয়োজনীয় সূর্যমুখীর বীজ প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
বাজারে প্রতি কেজি সূর্যমুখী ফুলের বীজের দাম ২০০ টাকা এবং বীজ (বপনের উপযোগী) হিসেবে বিক্রি করলে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি লিটার সূর্যমুখী তেল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।