বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপির কর্মীর মালিকানাধীন মার্কেটের তালা চার দিনেও খোলা হয়নি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সীর নেতৃত্বে মার্কেটটিতে তালা দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার সকালে ওই মার্কেটে অবস্থিত দোকান খুলতে গিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের ভয়ে চলে আসেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। তাঁদের দাবি, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা মার্কেট বন্ধ করেনি’—এই মর্মে লিখিত দিতে তাঁদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই বাজারের ওই মার্কেটের মালিকের নাম আক্কেল আলী সরদার (৪৫)। তাঁর মার্কেটের তিনটি তলায় ৪০টি দোকান ও ২টি ব্যাংকের শাখা আছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচির আগে গত শুক্রবার রাতে একটি প্রস্তুতি সভায় যোগ দেন তিনি। এ কারণে গৌরনদী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা গত শনিবার সকালে মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বের করে দিয়ে তালা দেন।
তবে এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোয় ‘বিএনপি কর্মীর মার্কেটে আ.লীগ নেতার তালা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর আজ সকালে আওয়ামী লীগের স্থানীয় কার্যালয়ে সভা করেন খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতারা। সভায় উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতলেব তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সেরনিয়াবাত, ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর আলম সেরনিয়াবাত, বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য প্রদীপ কুমার দেসহ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি প্রথম আলোকে জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মার্কেট খোলার ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আওয়ামী লীগ নেতারা মার্কেট বন্ধ করেনি লিখিত নেওয়া এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে থেকে কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়নি এই মর্মে লিখিত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কেটের ছয়জন ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল আটটার দিকে তাঁরা দোকান খুলতে যান। কিন্তু ছাত্রলীগ-যুবলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী ভয়ভীতি দেখালে সেখান থেকে চলে আসেন তাঁরা।
মার্কেটের একটি ফলের দোকানের মালিক আনোয়ার হোসেন (৩৫) অভিযোগ করেন, ‘আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মার্কেটের সামনে মহড়া দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের মার্কেটে আসতে দিচ্ছে না। আমি মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে দোকান খুলতে গেলে আমাকে গালিগালাজ করে চলে যেতে বলে। ফল কাঁচামাল। আমার দোকানে ভেতরে থাকা ফল পচে যাচ্ছে।’
ব্যবসায়ী আলম সরদার (৪০) বলেন, ‘সব ব্যবসায়ী বাজারে আসলেও দোকান খুলতে পারছি না। আমরা আতঙ্কে আছি, মুখ খুলতে পারছি না।’
আক্কেল আলী সরদার বলেন, ‘আমি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলার কারণে ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মার্কেট বন্ধের অভিযোগ করার কারণে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে আমাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। গায়েবি ও মিথ্যা মামলায় আমাকে আসামি করছে।’
ভবনটিতে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখা আছে। শাখার ব্যবস্থাপক মো. মহিদুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভবনমালিকের সঙ্গে রাজনৈতিক গন্ডগোল রয়েছে, এ কারণে ছেলেরা এসেছিল।’ আজ তিনি জানান, লেনদেনসহ শাখার কাজকর্ম চলছে। এর বেশি কথা বলতে রাজি হননি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মতলেব মাতুব্বর কথা বলতে রাজি হননি। ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সেরনিয়াবাত বলেন, ‘আমরা কোনো দোকানপাট বন্ধ করিনি। আক্কেল আলীর সঙ্গে বিরোধের কারণে ব্যবসায়ীরা আতঙ্ক থেকে দোকান বন্ধ রেখেছে।’
বাকাই বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে একটা সমস্যা চলছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মূল অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, সেই উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফরহাদ হোসেন মুন্সীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।