চাকরির দাবিতে দলবল নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের দপ্তরে ঢুকে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় ও বেলা ২টায় দুই দফা নেতা–কর্মীদের নিয়ে তিনি উপাচার্যের দপ্তরে যান। এ সময় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনায় তাঁরা বিব্রত হন।
এর আগে চলতি বছরের ৩১ মার্চ একই দাবিতে ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়ার নেতৃত্বে উপাচার্যের দপ্তরে গিয়ে প্রথমে তাঁর সঙ্গে উচ্চবাচ্য এবং দেড়টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে উপাচার্যের গাড়ি আটকে দেন। তখন উপাচার্য গাড়িতে ছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া নেতা–কর্মীদের নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্যের দপ্তরে যান। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাদের চাকরি দেওয়ার জন্য উপাচার্যকে চাপ দেন। এ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে তাঁদের দীর্ঘক্ষণ বাগ্বিতণ্ডা হয়। উপাচার্যের দপ্তরে তখন উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষক। উপাচার্য ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সাফ জানিয়ে দেন, মেধার ভিত্তিতে পরীক্ষা দিয়ে যাঁরা উত্তীর্ণ হবেন, তাঁরাই চাকরি পাবেন। তখন ছাত্রলীগের সভাপতি উপাচার্যকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বললেও চাকরি দেবেন না?’ জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নীতিমালার বাইরে চাকরির জন্য বলবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না। বিশ্ববিদ্যালয় সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, আইনের মধ্যে চলে। ছাত্রলীগের কেউ যদি মেধা দিয়ে আসে, অবশ্যই নিয়োগ বোর্ড তাঁকে চাকরি দেবে। কিন্তু চাপ দিয়ে, দুর্ব্যবহার করে চাকরি আদায়ের চেষ্টা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’ পরে বেলা দেড়টার দিকে তাঁরা বেরিয়ে যান। এরপর বেলা দুইটায় তাঁরা উপাচার্যের কক্ষে ঢুকে আবার উচ্চবাচ্য করেন।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, হলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের চাকরির জন্য উপাচার্যের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, চাকরি দিতে পারবেন না। এ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ড হয়।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘একদল লোক উপাচার্যের দপ্তরে ঢুকে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এতে আমি প্রচণ্ড বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি।’
উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, চাকরির দাবি নিয়ে দুই দফা তাঁর দপ্তরে আসেন ইলিয়াস। ইলিয়াস তাঁর সঙ্গে অসদাচরণ করেন। তিনি বলেছেন, মেধার ভিত্তিতে চাকরি হবে। আবেদনকারীরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে চাকরি পাবেন। সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে নিয়োগ বোর্ড চাকরি দেবে। এখানে চাপ দিয়ে কিছু করা যায় না। আগেও তাঁরা চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছেন।
উপাচার্য আবদুল মঈন আরও বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, নিয়ম, নীতিমালা মোতাবেক চলে। চাইলেই উপাচার্য বেআইনি কাজ করতে পারেন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ করছেন। পাঠদান, পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশ ছাড়াও এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রম বেড়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মান আরও উন্নত করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম আবদুল মঈন। যোগদানের দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ দলীয় নেতা–কর্মীদের চাকরি দেওয়ার জন্য নতুন উপাচার্যকে চাপ দেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন হলের উন্নয়নকাজ তাঁদের দেওয়ার দাবি তোলেন। আট মাস পর আবার চাকরি দেওয়ার দাবি তোলা হলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১০ জন শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি পক্ষের ইন্ধনে এ বিব্রতকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। ১ ডিসেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচন। বড় একটি পক্ষকে বাদ দিয়ে ওই নির্বাচন হচ্ছে। উপাচার্যকে চাপে ফেলতে এ ক্ষেত্রে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ছাত্রলীগের সভাপতি মো. ইলিয়াস মিয়া ২০০৭ সালের ২৮ মে থেকে ক্যাম্পাসে আছেন। তাঁর ছাত্রত্ব শেষ। কমিটির মেয়াদও শেষ। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের বাবা। তবু তিনি হলে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।