বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও জনতার এক দফা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর। শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগের সময়সীমা বেঁধে দেওয়াসহ ৯ দফা দাবি জানালেও কেউ পদত্যাগ করেননি।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ ছাড়া ছাত্র পরামর্শকসহ বিভিন্ন প্রশানিক দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত সোমবার শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। এরপর গত বুধবার প্রক্টরকে অব্যাহতি দেয় প্রশাসন। ছাত্র পরামর্শকসহ কয়েকজন প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক নিজেদের দায়িত্ব থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এতে শিক্ষার্থীদের কিছু দাবি পূরণ হয়েছে।
আজ রোববার নতুন করে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষের পদত্যাগ; নতুন করে প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরামর্শ করা; দলীয় ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা; এসবের ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিরাপদ করা।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা শিক্ষার্থী জেনাস ভৌমিক বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের দাবি আদায় করতে চাই। এসব দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের।’
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিও। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল শনিবার শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের এক অনলাইন সভায় শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর সঙ্গে শিক্ষক সমিতি একমত পোষণ করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীর প্রক্টরসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে থাকা শিক্ষকদের অব্যাহতি ও পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেকেই হলে উঠেছেন। কিন্তু উপাচার্য এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন না। শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌমিত্র শেখর মুঠোফোনে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা কেন আমার পদত্যাগ দাবি করেছে সেটা আমি বুঝতে পারছি না। ছাত্র আন্দোলনের সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আমরা নিরাপদ রেখেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে আমাদের কোনো শিক্ষার্থী আহত পর্যন্ত হয়নি। আমি ক্যাম্পাসে না থাকলেও নিয়ম মেনে আমার কাজ করে যাচ্ছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমি ক্যাম্পাসে ফিরব।’