নান্দাইলে উপজেলা প্রশাসনের ইতিবাচক সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা

ময়মনসিংহ বিভাগ
ময়মনসিংহ বিভাগ

ময়মনসিংহের নান্দাইলে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় প্রথম আলোর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ ও স্থানীয় প্রতিনিধিকে সরকারি অনুষ্ঠানে বর্জনের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নান্দাইলে কর্মরত সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে নান্দাইল উপজেলা প্রশাসনের সব ইতিবাচক সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল রোববার নান্দাইল প্রেসক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এ সভা চলে। এতে সভাপতিত্ব করেন নান্দাইলের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মো. হাবিবুর রহমান। এ সময় সাংবাদিক এনামুল হক, অরবিন্দ পাল, মজুমদার প্রবাল, মো. রফিকুল ইসলাম, জালাল উদ্দিন মণ্ডল, আলম ফরাজী, মোখলেছুর রহমান, শামছ ই তাবরীজ, শাহ আলম ভূঁইয়া, বিল্লাল হোসেন, আহসান কাদের ভূঁইয়াসহ ৩৩ সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ময়মনসিংহের নান্দাইলের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খানের বিরুদ্ধে টিআর ও কাবিটা প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় প্রথম আলোর বিরুদ্ধে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় নিন্দা প্রস্তাব তোলা হয়। ১৭ আগস্ট নান্দাইল উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ নিন্দা প্রস্তাবটি তোলেন। একই সঙ্গে সভায় তিনি প্রথম আলোর স্থানীয় প্রতিনিধি রমেশ কুমারকে তাঁদের সব অনুষ্ঠান থেকে বর্জনের ডাক দেন।

গতকাল প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায় এনামুল হক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ের সরকারের প্রতিনিধি। তিনি পদাধিকারবলে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ওই কমিটিতে সাংবাদিক প্রতিনিধিদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হচ্ছেন স্থানীয় আসনের সংসদ সদস্য এবং উপদেষ্টা হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

এনামুল হক অভিযোগ করে বলেন, সরকারি কমিটির একজন উপদেষ্টা হয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একজন পেশাদার সাংবাদিকের প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। এমনকি প্রথম আলোর মতো একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সভায় নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণের জন্য অন্য সদস্যদের চাপ দিয়েছেন। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট পত্রিকার প্রতিনিধি রমেশ কুমারকে সব সরকারি অনুষ্ঠানে বর্জনের একতরফা ঘোষণা দিয়েছেন। এ বিষয়ে সভায় উপস্থিত সাংবাদিকেরা প্রতিবাদ ও বক্তব্য দিতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। বক্তব্য প্রদানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কমিটির সভাপতি ইউএনও মোহাম্মদ আবুল মনসুর ওই দিন অপ্রত্যাশিতভাবে সভা সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

প্রেসক্লাবের মতবিনিময় সভায় বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জেরে বিভিন্ন সময় তাঁদের নাজেহাল ও লাঞ্ছিত করার তথ্য তুলে ধরেন। সাংবাদিকেরা একটি ঐক্যবদ্ধ পরিষদ গঠন করার আহ্বান জানান, যেন কোনো সাংবাদিক পেশাগত সমস্যায় পড়লে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ জানাতে পারেন।

সভা শেষে সাংবাদিক এনামুল হক মতবিনিময় সভায় গৃহীত সারসংক্ষেপ পাঠ করে শোনান। তিনি বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতির একটি সম্মানজনক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সাংবাদিকেরা নান্দাইল উপজেলা প্রশাসনের সব ধরনের ইতিবাচক সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা কমিটির পরবর্তী সভাগুলো সাংবাদিকেরা বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরে ঐক্যবদ্ধ পরিষদ গঠনের বিষয়ে আরেকটি সভা আয়োজন করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

১৪ আগস্ট স্থানীয় সংসদ সদস্যকে নিয়ে প্রথম আলোয় ‘প্রকল্পের কাজ কাগজে আছে, বাস্তবে নেই’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথম আলোর কপি পোড়ান।