মাদারীপুরে হামলায় নিহত ইকবাল ব্যাপারীর দোকান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। গতকাল শনিবার শহরের চরমুগরিয়া বাজারে
মাদারীপুরে হামলায় নিহত ইকবাল ব্যাপারীর দোকান আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা। গতকাল শনিবার শহরের চরমুগরিয়া বাজারে

মোটরসাইকেলের ধাক্কার জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, বোমা হামলায় ব্যবসায়ী নিহত

মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় বোমা বিস্ফোরণ, দুটি বসতঘরে আগুন ও ২০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। গতকাল শনিবার রাত আটটার দিকে শহরের চরমুগরিয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ইকবাল ব্যাপারী (৩০) চরমুগরিয়া মাস্টারকোলনি এলাকার সোলেমান ব্যাপারীর ছেলে। তাঁর কসমেটিকসের দোকান ছিল। এ ঘটনায় উভয় পক্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার বিকেলে নিহত ইকবাল ব্যাপারীর মোটরসাইকেলের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী হাওলাদার বাড়ির জিহাদ হাওলাদারের (১৬) ধাক্কা লাগে। ওই ঘটনার জের ধরে ইকবালের দোকানে শুক্রবার সন্ধ্যায় হামলা চালান হাওলাদার বাড়ির লোকজন। এ সময় ইকবালের সমর্থকদের সঙ্গে হাওলাদার বাড়ির লোকজনের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেলে নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে গতকাল সন্ধ্যায় হাওলাদার, সরদার, মৃধা, ব্যাপারী বংশের লোকজন একজোট হয়ে চরমুগরিয়া বাজারে দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান। এ সময় ইকবাল ও খান বংশের লোকজন এই হামলা প্রতিরোধ করতে যান। উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধ্যা থেকে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এ সময় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

বোমার আঘাতে ইকবালসহ গুরুতর আহত হন অন্তত ১০ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ইকবালকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ইকবালকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ঢাকায় নেওয়ার পথেই মারা যায় ইকবাল।

নিহত ইকবাল ব্যাপারী

এর আগেই চরমুগরিয়া বাজারে নিহত ইকবালের দোকানসহ ২০টি দোকান, যুবলীগ নেতা ও জেলা পরিষদের সদস্য নাঈম খানের বসতঘর–অফিস কক্ষ ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এ ছাড়া দুটি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি করেছেন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা। তাঁদের দাবি, মাদারীপুর পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাশার ব্যাপারী, বিএনপি নেতা খলিল ব্যাপারী, কালু মৃধা, সুলতান ব্যাপারীর নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে।

নিহত ইকবাল ব্যাপারীর স্ত্রী লিমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীকে কেন ওরা মারল? কী দোষ ছিল তাঁর? যারা আমার স্বামীর হত্যার জন্য দায়ী, তাদের বিচার চাই। তাদের ফাঁসি চাই।’

নিহত ব্যক্তির বড় ভাই বায়েজিদ ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামান্য একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওরা আমার ভাইটারে বোমা মেরে খুন করল। এ ঘটনার সঙ্গে হাওলাদার, সরদার, মৃধা, ব্যাপারী বংশের লোকজন জড়িত। তাঁদের বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে কাউন্সিলর বাশার ব্যাপারী বলেন, ‘সংঘাতের ঘটনায় আমাদের কোনো ইন্ধন নেই। কীভাবে কী হয়েছে, তা–ও বলতে পারব না। আমরা সব সময়ই এলাকায় শান্তি–সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে এসেছি। তবুও একটি পক্ষ অন্য পক্ষকে ফাঁসাতে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে বারবার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে।’

মাদারীপুর সদর মডেল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় লোকজন এই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে বোমার আঘাতে আহত এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। এর আগেও চরমুগরিয়া বাজারে এই পক্ষগুলো সংঘর্ষে জড়িয়েছিল। দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।