নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন। শনিবার দুপুরে
নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানিয়ে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন। শনিবার দুপুরে

পটুয়াখালীর কলাপাড়া

আমি স্বাভাবিক চলাফেরায় ভয় পাচ্ছি: নবনির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান

‘আমার বাবা আওয়ামী লীগের একাধিকবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। আমি এখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। অথচ আমি নিজেকে নিয়ে চরমভাবে শঙ্কিত। যেকোনো সময় দুষ্কৃতকারীরা আমার ওপর হামলা করতে পারে। আমি স্বাভাবিক চলাফেরায় ভয় পাচ্ছি। আমার কর্মী নজরুল খন্দকারকে গ্রেপ্তার, পরবর্তী সময়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) রহস্যজনক আচরণ এবং তাঁর অপসারণের প্রতিবাদে পালিত কর্মসূচির কারণে আমি এমন উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনা পারভীন সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন। আজ শনিবার বেলা একটার দিকে কলাপাড়া পৌর শহরে নিজ বাসভবনে তিনি এ সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি বর্তমানে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহিনা দ্বিতীয়বারের মতো নারী ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ৯ জুন বিকেলে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাখিমারা বাজারে এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন পাখিমারা বাজারে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে তিনি প্রবেশ করতে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি আবদুর রহমান তালুকদার তাঁকে দেখে দ্রুত কার্যালয় বন্ধ করে চলে যান। কিছুক্ষণ পর শাহিনা ঘুরে এসে দেখেন, কার্যালয় খোলা এবং কার্যালয়ে আবদুর রহমান বসে আছেন। তখন আবদুর রহমানের কাছে কার্যালয় বন্ধের কারণ জানতে চান শাহিনার সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীরা। এ নিয়ে রহমানের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি ও একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে কলাপাড়া থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নজরুল খন্দকার নামে শাহিনার এক কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে শাহিনা ও তাঁর ভাই থানায় গিয়ে তাঁকে আটকের কারণ জানতে চান। পরে তাঁরা নজরুলকে আটকের প্রতিবাদে রাতভর থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন সকালে তাঁরা ওসিকে প্রত্যাহার করার দাবিতে পৌর শহরে ঝাড়ু মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে শাহিনা পারভীন বলেন, ওই দিন পাখিমারা বাজারে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা বা ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আবদুর রহমান তালুকদার নামে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি পাখিমারা বাজারের আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুরের মিথ্যা নাটক সাজিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তাঁকে ওই ঘটনায় জড়িয়ে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, ওই ঘটনার পর তিনি থানায় গিয়ে বসে থাকলেও ওসি কোনো সৌজন্য দেখাননি। নজরুলকে তুলে আনার কারণ জানতে চাইলে ওসি জানান, পাখিমারায় আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও আবদুর রহমান তালুকদারের বাসা ভাঙচুর হয়েছে। নজরুল সেই মামলার আসামি। তখন রাত সোয়া একটা বাজে। তখন পর্যন্ত থানায় কোনো এজাহার দাখিল হয়নি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে নজরুলকে আগেই আসামি হিসেবে ধরে আনা হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই ঘটনার পর ১২ জুন মামলা প্রত্যাহারে দাবিতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে পাখিমারা বাজারে মানববন্ধন করতে যান শাহিনা। খবর পেয়ে আবদুর রহমান তালুকদার বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন জড়ো করেন। তাঁদের পাল্টা আয়োজন দেখে শাহিনা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি স্থগিত করে চলে আসেন। এরপর রহমান তালুকদারের লোকজন তাঁর চাচাতো ভাই আলাউদ্দিন মিয়ার বাসের কাউন্টার ও তাঁর বাড়িতে হামলা করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

সংবাদ সম্মেলনে শাহিনা অভিযোগ করেন, ওই হামলার ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে কলাপাড়া থানা তাঁদের মামলা নেয়নি।

অভিযোগের বিষয়ে কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,নারী ভাইস চেয়ারম্যান নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার বিষয়টি তাঁদের জানাননি। তাঁরা দেখছেন, তিনি স্বাভাবিকভাবে সব সব কার্যক্রম করছেন। ওই দিনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রহমান তালুকদার বলেন, ওই দিন নারী ভাইস চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা ঝগড়া বাধায়। ভাইস চেয়ারম্যানের লোকজন তাঁর ছেলেসহ কয়েকজন মারধর করেছেন। একপর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙচুর করেন। এরপর তাঁর বাড়িতে গিয়ে হামলা করেন।

জানতে চাইলে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার বলেন, ঘটনার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত দলের প্রধান হিসেবে ঘটনাস্থলে গিয়ে যাচাই করে দলীয় কার্যালয়ের সামনের ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। তবে রহমান তালুকদারের বাড়ির হামলার ঘটনায় স্থানীয় ব্যক্তিরা কিছুই জানাননি। তাঁরা দলীয়ভাবে বিষয়টি দেখছেন।