নির্বাচন দেরি হলে সমস্যাগুলো বাড়বে: মির্জা ফখরুল

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের আদালত মাঠে
ছবি: প্রথম আলো

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আমরা এ সরকারকে পুরোপুরি সমর্থন করব বলেছিলাম। তিন মাসে আশা করেছিলাম, সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেবেন। এ দেশ কীভাবে চলবে, তা ৩১ দফার মাধ্যমে বহু আগেই বিএনপি তুলে ধরেছিল। জঞ্জাল পরিষ্কার করে যত দ্রুত নির্বাচন দেবেন, জাতির জন্য মঙ্গল। দেরি হলে সমস্যাগুলো বাড়বে। এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে পরামর্শ নিন।’

আজ বুধবার বিকেলে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা সদরের আদালত মাঠে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব। মানুষ ভোট দিতে চান। ভোটের মাধ্যমে পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করে বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে চান। আওয়ামী লীগ ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে। সুযোগ নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ দেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ, আধিপত্য আর মেনে নেবে না।’

বিএনপির আন্দোলন শেষ হয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শেষ হয়নি। জনগণের অধিকার, ভোটাধিকার, বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে, দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে পারলেই এ আন্দোলন শেষ হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এবারের ছাত্র–জনতার আন্দোলনেও ফেনীর অনেককে হত্যা করা হয়েছে। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ আমাদের ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ২০ হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে হত্যা ও ৭০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। এখনো সন্তান ও পিতাহারা মানুষজন স্বজনদের ফেরার অপেক্ষা করছেন। আমরা মামলা নিয়ে কারাগারে গেছি, কিন্তু মাথা নত করিনি। এ সংগ্রামের মাধ্যমে আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ ও স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি।’

এ দেশকে যা কিছু দিয়েছে, তা বিএনপি দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ দেশকে যা কিছু দিয়েছে, তা বিএনপি দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন তা টিকিয়ে রাখতে পারেনি। জিয়াউর রহমান এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি নতুন করে অর্থনীতি ও সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত করেছিলেন। তারপর তাঁকে হত্যার পর এরশাদ চেষ্টা করেছিলেন দেশকে ধ্বংস করার। কিন্তু খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে তাতেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।’

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় বিএনপির জনসভায় হাজারো নেতা-কর্মী যোদ দেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এমন সমাবেশে একত্র হয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের আদালত মাঠে

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। নিজেরা লুটপাট করেছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। খালেদা জিয়াকে পরাজিত ও ধ্বংস করার জন্য এরশাদ ও আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি। তিনি অনেক বেশি অসুস্থ। আমরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও ফেনী-১ আসনের (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম) সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেবের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, বিএনপির সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার, জাতীয় কমিটির সদস্য সাহানা আখতার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন, ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন খান।

এদিকে এ জনসভাকে ঘিরে দুপুর থেকে ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) আসনের হাজারো নেতা-কর্মী ছাগলনাইয়ার আদালত মাঠে জড়ো হন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এমন সমাবেশে একত্র হয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।

এর আগে দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ির প্রাঙ্গণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ঢেউটিন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।