বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পয়সারহাট সেতুর পূর্ব পাশে বাজারের কাছে বোমা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতার দায়ের করা ‘গায়েবি মামলা’য় উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতা–কর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০–৮০ জনকে আসামি করে গতকাল শুক্রবার মামলাটি করেন।
মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা হলেন আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সরোয়ার হোসেন মিয়া, আবুল হোসেন মোল্লা, শাহ মো. বক্তিয়ার, মো. শামছুল হক, খোন্দকার মোহাম্মদ আলী, মো. জাহিদ মোল্লা সানিয়াত, বাকাল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. হান্নান মিয়া, জিকরিয়া খান, বাগধা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল ফয়েজ, বাগধা ইউনিয়ন বিএনপির ৪ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির আহ্বায়ক মো. এমদাদুল হক বক্তিয়ার, গৈলা ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক এনায়েত হোসেন, রত্নপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, সদস্যসচিব মিজান শাহ, বরিশাল জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আলী হোসেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শোভন রহমান, উপজেলা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি সালমান হাসান, রত্নপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান কাজী, যুবদল বাকাল ইউনিয়ন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আকবর ফকির, বাকাল ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম পাইক (২৮), বাগধা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর রহমান ভাট্রি, আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. জুয়েল মোল্লা, আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. মহিদুল মোল্লা, যুগ্ম আহ্বায়ক আলাল মৃধা ও আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেমায়ত হোসেন তালুকদার।
মামলার বাদী উপজেলার বাকাল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম পাইক এজাহারে উল্লেখ করে বলেন, ‘শুক্রবার রাত সাড়ে ছয়টার দিকে আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বিপুল দাস, ফিরোজ সিকদার, রাজ্জাক শেখসহ ১৫–২০ জন নেতা–কর্মীকে নিয়ে পয়সারহাট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সভা শেষ করে আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরে যাচ্ছিলাম। পথে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক সড়কের পয়সারহাট সেতুর পূর্ব পাশে বাজারের কাছে পৌঁছালে জামায়াত ও বিএনপির এজাহারে উল্লেখিত নামীয়সহ শতাধিক সন্ত্রাসী নেতা–কর্মীকে দেখতে পাই। তারা সড়কে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে টায়ার জ্বালিয়ে গাড়িতে আগুন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় আমরা ডাকচিৎকার দিলে সন্ত্রাসীরা তিন–চারটি বোমা নিক্ষেপ করে সটকে পড়ে।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে রাতের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, এখানে সহিংসতা ও বোমা হামলার ঘটনা সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানেন না।
পয়সারহাট সেতুসংলগ্ন বাজারের তিন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এজাহারে উল্লেখিত সময়ে এখানে কোনো ঘটনা ঘটেনি বা আমরা বোমার কোনো শব্দ পাইনি।’
আগৈলঝাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বরিশাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. আবুল হোসেন বলেন, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলা মামলা নির্যাতনে বিএনপির নেতা–কর্মীরা এলাকাছাড়া। তাঁরা এলাকায় থাকতে পারেন না। অথচ বিনা ঘটনায় হামলা–ভাঙচুর, আগুন ও বোমা হামলার মিথ্যা ঘটনা দেখিয়ে শতাধিক বিএনপি নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে মামলার বাদী আওয়ামী লীগ নেতা মো. শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসীরা ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মামলা হয়েছে।
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাজাহারুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্কালে ২০১৮ সালের একই দিনে (৩ নভেম্বর) আগৈলঝাড়া বিএনপির তিন শতাধিক নেতা–কর্মীকে আসামি করে তিনটি ‘গায়েবি মামলা’ করা হয়েছিল।