রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক কর্মচারীকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৬৪ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ওই কর্মচারী বিকেলে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
হল প্রশাসন বলছে, তারা অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। অভিযুক্ত দুই ছাত্রলীগ নেতা হলেন মাজহারুল ইসলাম ও মোমিন ইসলাম। মাজহারুল সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগ নেতা মোমিন ইসলাম শহীদ শামসুজ্জোহা হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সংস্কৃতি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। মারধরের শিকার রফিকুল ইসলাম সংস্কৃতি বিভাগের অফিস সহায়ক।

লিখিত অভিযোগে রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় আরিফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে তাঁকে ফোন করেন এবং সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৬৪ নম্বর রুমে (কক্ষে) ডেকে নেন। পরে ছাত্রলীগ নেতা মোমিন ও মাজহারুল রুমের জানালা-দরজা বন্ধ করে দেন। পরে ওঁরা আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পাইপ দিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। পরে জ্ঞান ফিরলে দেখি, আমার মাথায় পানি ঢালছেন। পরে তাঁরা আমাকে হলের গেটে নিয়ে এসে পালিয়ে যান। এ সময় বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন। অন্যথায় মেরে ফেলার হুমকি দেন।’
আরিফুল ইসলাম সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সোহরাওয়ার্দী হলের ৩৬৯ নম্বর কক্ষে থাকেন। কল দিয়ে ওই অফিস সহায়ককে কক্ষে ডেকে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি কিছুই জানি না। কাউকে কল দিইনি। আমি রুমে ঘুমাচ্ছিলাম। পরে জানতে পারি, আমাদের বিভাগের কর্মচারী রফিকুল ভাইকে হলে ডেকে মারধর করা হয়েছে।’

সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, ‘বিষয়টি কিছুক্ষণ আগেই জেনেছি। তাঁরা কাজটি ঠিক করেননি। আমি বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে জানিয়েছি। তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।’
মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোমিন ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মেয়ের অসুস্থতার কথা বলে রফিকুল ইসলাম আমার কাছ থেকে মার্চ মাসে পাঁচ হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন। পরে আমি তাঁর কাছে টাকা চাই। কিন্তু তিনি আজকে দেব, কালকে দেব বলে কালক্ষেপণ করেন। পরে আজকে সকালে উনাকে হলে ডেকে নিয়ে আসি। তিনি (রফিকুল) বলেন, আরেকজনকে নাকি আমাকে দেওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আমি টাকা পাইনি। পরে বিষয়টি তাঁকে বুঝিয়ে হল গেটে ছেড়ে দেই।’

এদিকে অভিযুক্ত আরেক ছাত্রলীগ নেতা মাজহারুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
টাকা ধার করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেন ভুক্তভোগী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘একজন ছাত্রের কাছ থেকে কেন টাকা ধার নেব?’ তিনি উল্টো অভিযোগ করেন, ছাগল বিক্রির ৩০ হাজার টাকা ছিল তাঁর কাছে। মারধরের সময় সে টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ওই অফিস সহায়ককে মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। তাঁরা দেখেছেন, তাঁকে (রফিকুল) যখন হলে নিয়ে আসা হয়েছে, তখন তিনি সুস্থ ছিলেন। পরে হল থেকে বের হওয়ার সময় তাঁকে অসুস্থ দেখা গেছে।