কাজল মিয়া
কাজল মিয়া

‘আমি চলে আসব’ বলে মিছিলে যাওয়া কাজল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আইসিইউতে

কাজল মিয়ার প্রথম বিবাহবার্ষিকী ছিল ২ আগস্ট। তিন দিন পর ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে যান। বের হওয়ার সময় স্ত্রীকে বলে গিয়েছিলেন, ‘আমি চলে আসব, চিন্তা কোরো না।’ কিন্তু এখনো বাড়ি ফেরেননি কাজল। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি।

কাজল মিয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের সদ্য সাবেক শিক্ষার্থী। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ভাড়া থাকেন। বাড়ি গোপালগঞ্জে। ঘটনার দিন তাঁর বড় ভাই ব্যবসায়ী রুবেল হাসানের নারায়ণগঞ্জের বাসা থেকে আন্দোলনে যান কাজল। পরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বর্তমানে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

বিবাহবার্ষিকীর তিন দিনের মাথায় স্বামীর এই পরিণতি কিছুতেই মানতে পারছেন না স্ত্রী ছিনথিয়া আক্তার।

সে আদর্শিক জায়গায় সব সময় সৎ ছিল। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত। আমি তাকে বলেছিলাম, জীবন এভাবে চলে না। সে তারপরও আন্দোলনে গিয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে।
রুবেল হাসান, কাজল মিয়ার বড়ভাই

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কাজলের বড় ভাই রুবেল হাসান জানান, ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে বের হয়ে পড়েন কাজল। পরে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে আন্দোলনকারীদের। সেখানে পুলিশ গুলি ছুড়লে কাজলের মাথায় গুলি লাগে। গুলিটি মাথার পেছনের অংশ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে মাথার খুলি ভেঙে ঘিলু বের হয়ে যায়। পরে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন উদ্ধার করে তাঁকে যাত্রাবাড়ী স্পেশালাইজড মেডিকেল কেয়ারে নিয়ে যান।

সেখানে মানিব্যাগে থাকা পরিচয়পত্র দেখে তাঁর পরিচয় জানতে পারেন আন্দোলনকারীরা। রুবেল হাসানের সঙ্গে বেলা দুইটার দিকে যোগাযোগ করেন আন্দোলনকারীদের একজন। রুবেল হাসপাতালে পৌঁছানোর পর রাত ১২টার দিকে তাঁকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের চিকিৎসক আতিকুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে যখন তাকে (কাজল) নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন অবস্থা ক্রিটিক্যাল (আশঙ্কাজনক) ছিল। তাঁর চিকিৎসা চলছে। তবে অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।’

কাজলের শরীরের বাঁ পাশের অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ী রুবেল হাসান বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আমাকে সব সময় অনুসরণ করত। সে আমার মতো ব্যবসা করবে, এমনটা স্বপ্ন ছিল। সে আদর্শিক জায়গায় সব সময় সৎ ছিল। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত। আমি তাকে বলেছিলাম, জীবন এভাবে চলে না। সে তারপরও আন্দোলনে গিয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে।’

কাজলের স্ত্রী ছিনথিয়া আক্তার কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে আন্দোলনে যাওয়ার দিন সকালে আমাকে কপালে চুমু দিয়ে বলেছিল, ‘‘দেশে এত অন্যায়-অবিচার হচ্ছে, ঘরে বসে থাকা যায় না। আমি যাচ্ছি আন্দোলনে, আমার কিছু হবে না। আমি চলে আসব, চিন্তা করো না।’’ পরে তিনি নামাজ পড়ে দোয়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন।’

ছিনথিয়া আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী খুবই ভালো মানুষ। আল্লাহ আমার স্বামীকে সুস্থ করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিক।’