বরিশাল নগরের সোহেল ফরাজীকে (১৫) দুই মাস আগে তার এক বন্ধু বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। গত বৃহস্পতিবার পুলিশ সোহেলের ওই বন্ধুকে আটক করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের খায়রাবাদ সেতুর নিচ থেকে কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়।
থানা-পুলিশ জানায়, ওই বন্ধু জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, তারা সোহেলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করে লাশ ওই স্থানে ফেলে রাখে। মূলত সোহেলের সঙ্গে থাকা ব্যাটারিচালিত রিকশাটি ছিনতাইয়ের জন্য তারা এ পরিকল্পনা করে।
নিহত সোহেল দক্ষিণ আলেকান্দা রিফিউজি কলোনির বাসিন্দা। তার বাবার নাম ফরিদ ফরাজী। বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহমান গতকাল শুক্রবার বিকেলে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে খয়রাবাদ সেতুর নিচ থেকে হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। সোহেলের যে বন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার বাড়িও একই এলাকায়। তাঁরা এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।
সোহেলের ভাই সোহাগ ফরাজী বলেন, তাঁর ভাই ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে কাজ করত। চালক বিদেশে চলে যাওয়ায় সে বেশ কিছুদিন বেকার ছিল। দুই মাস আগে ভাইকে তার এক বন্ধু বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। তখন সোহেল বাবার ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বের হয়। এর পর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। সোহেলের ওই বন্ধুও নিখোঁজ ছিল।
পরে স্থানীয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁরা জানতে পারেন, ওই বন্ধু বাড়িতেই আত্মগোপন করেছিল। স্থানীয় ব্যক্তিরা সোহেলের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে উল্টাপাল্টা উত্তর দেয়। এ সময় সন্দেহ হওয়ায় তাকে আটকে রেখে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় খবর দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার ভাইকে হত্যার কথা স্বীকার করে। ঘটনাস্থল বন্দর থানা এলাকায় হওয়ায় বন্দর থানা-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তারা পরে ছেলেটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খয়রাবাদ সেতুর নিচ থেকে হাড়গোড় উদ্ধার করে।
সোহেলের বন্ধুর বরাত দিয়ে থানা-পুলিশ জানায়, সেসহ আরও তিন বন্ধু সোহেলের বাবার ব্যাটারিচালিত রিকশাটি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরের লাকুটিয়া সড়কের একটি দোকান থেকে ঘুমের ওষুধ কেনে তারা। এরপর কীর্তনখোলা নদীর ওপর সেতুতে গিয়ে ঘুমের ওষুধ গুঁড়া করে এনার্জি ড্রিংকসের সঙ্গে মেশানো হয়। এরপর সেখান থেকে চারজন খয়রাবাদ সেতুর নিচে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই পানীয় সোহেলকে পান করানো হয়। এরপর সোহেল অচেতন হয়ে গেলে তাকে নদীর মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। পরে রিকশা বিক্রি করে তারা পালিয়ে যায়।
বন্দর থানার ওসি আবদুর রহমান মুকুল বলেন, আসামির স্বীকারোক্তি ও নিহত কিশোরের পরিবার ঘটনাস্থলে থাকা প্যান্ট দেখে সোহেলের পরিচয় শনাক্ত করেছে। এরপরও তাঁরা ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে নিহত কিশোরের মা মুকুল বেগম বাদী হয়ে চারজনের নামে একটি হত্যা মামলা করেছেন।
বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম বলেন, বন্দর থানা-পুলিশ কিছু হাড়গোড় উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন।