নাটোর শহরে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে আর শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে পুলিশ সুপারসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এই সময় পুলিশ অন্তত ১০ জনকে আটক করেছে।
সংঘর্ষের সময় রাহি (২৪) নামের এক তরুণ রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাটোর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন জানান, রাহি রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, তিনি শঙ্কামুক্ত।
প্রত্যক্ষদর্শী ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বেলা ১১টায় আন্দোলনকারীরা কানাইখালী এলাকায় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে মিছিল শুরু করে। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিলে বাধা দেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। সেখানে তিনজন আহত হন। পুলিশ সেখান থেকে পাঁচজনকে আটক করে।
বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আন্দোলনকারীদের বড় একটা দল মাদ্রাসা মোড়ে অবস্থান নেয়। তাঁরা নাটোর-রাজশাহী, নাটোর-বগুড়া ও নাটোর-পাবনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। এ সময় পুলিশ বিচ্ছিন্নভাবে তাঁদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন। এ সময় অন্তত পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাদ্রাসা মোড়ে এলে পুলিশ দুই আন্দোলনকারীকে আটক করে। এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা লাঠিসোঁটা ও ইটপাটকেল নিয়ে পুলিশকে ঘিরে ধরেন। তবে শতাধিক পুলিশ অতর্কিত বৃষ্টির মতো কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে এখানে পুলিশ সুপারসহ ৭ জন পুলিশ, ১৫ জন আন্দোলনকারী ও ৩ সাংবাদিক আহত হন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে পুলিশ, সাংবাদিক ও আন্দোলনকারীরা রয়েছেন। আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
সংঘর্ষে আহত চ্যানেল আইয়ের ফটোসাংবাদিক ফরহাদ হোসেন জানান, ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক অবরোধ করেছিলেন। হঠাৎ পুলিশ দুই ছাত্রকে আটক করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এ সময় ছাত্ররা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইট ও পাথর নিক্ষেপ করেন এবং পুলিশ মুহুর্মুহু টিয়ার গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় একটি টিয়ার গ্যাস তাঁর, প্রথম আলোর সাংবাদিক মুক্তার হোসেনসহ তিন সাংবাদিকের সামনে এসে পড়লে তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম জানান, জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ধৈর্য ধারণ করেছে। এ সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যরাই বেশি আহত হয়েছেন। দুপুর পর্যন্ত অন্তত ৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আটকের সংখ্যা তিনজন পর্যন্ত তাঁর জানা আছে। তবে এর সংখ্যা বেশি হতে পারে।
গুরুদাসপুরে আহত ৮
নাটোরের গুরুদাসপুরে ছাত্রদের কোটা সংস্কার দাবিতে বের করা মিছিলে হামলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ওই হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারী ছাত্ররা। হামলায় আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক তানভীর হাসানসহ কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছেন।
আহতরা ব্যক্তিরা হচ্ছেন তানভীর হাসান (১৮), সজিব হোসেন (১৯), সাদমান (১৯), মুইন হোসেন (১৭), জাকারিয়া (১৭), শুভ (২২), মুন্না শেখ (১৭) ও মিলন হোসেন (২১)।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, কোটাপদ্ধতি সংস্কার দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে শহরে মিছিল করছিলেন তাঁরা। মিছিলটি বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের সামনে পৌঁছামাত্রই পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লোহার রড, কাঠের বাটাম নিয়ে মিছিলের ওপর হামলা চালান।
হামলায় মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্ররা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এই সময় পাকা সড়কের ওপর পড়ে আহত হয়েছেন আট শিক্ষার্থী। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হওয়ার পর হামলাকারীরা লোহার রড নিয়ে শহরে মোটরসাইকেল মহড়া দেয়।
আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, কোটাপদ্ধতি সংস্কার দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলায় নেতৃত্ব দেন গুরুদাসপুর পৌর আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম, যুব ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মিল্টন উদ্দিন, পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্স মোল্লা, কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের, উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সেবক কুন্ড প্রমুখ।
আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক তানভীর হাসান ও যুগ্ম আহ্বায়ক মুন্না শেখ অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নেই। ছাত্রদের স্বার্থরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে মাঠে রয়েছেন। অথচ তাঁদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা চালিয়ে নিরীহ ছাত্রদের মারধর করে আহত করা হয়েছে।
মিছিলে হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জল হোসেন বলেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। শহরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। তা ছাড়া ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনায় কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।