আষাঢ়ের বৃষ্টি নেই। তীব্র রোদ। অসহনীয় গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তবে গরমকে উপেক্ষা করে সাত শতাধিক শিক্ষার্থী এসেছে কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি প্রাঙ্গণে। তাদের পদচারণে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। ২০২৪ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যেন প্রাণের উচ্ছ্বাসের কোনো ঘাটতি ছিল না।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। এর আগে থেকেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করে কৃতী শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশপথে দুটি বুথ। সংবর্ধনার নিবন্ধনের কার্ড নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীরা বুথ থেকে নাশতা ও ক্রেস্ট বুঝে নিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণে হাজির হয়।
সকালে আকাশে মেঘের ঘনঘটা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে আসে সূর্য। সকাল ১০টার দিকে প্রাঙ্গণজুড়ে ঝলমলে রোদ। তীব্র গরম উপেক্ষা করে আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সহপাঠীরা একে অপরকে দেখে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে। কেউ কেউ আড্ডায় মশগুল হয়ে পড়ে। কেউ আবার মাঠের দক্ষিণ অংশে সেলফি জোনে ব্যস্ত ছিল ছবি তোলায়। অভিভাবকদের উৎসাহও ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় পুরো মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল।
‘স্বপ্ন দেখো জীবন গড়ো’ স্লোগানে সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় শুরু হয়েছে জিপিএ-৫ উৎসব।
আয়োজনটি পাওয়ার্ড বাই বিকাশ এবং সহযোগিতায় থাকছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, বহুব্রীহি, সানকুইক, কনকা-গ্রি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা। কক্সবাজারের উৎসবে অংশ নিতে বিভিন্ন উপজেলার জিপিএ-৫ পাওয়া ৭৮১ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে।
৮৫ কিলোমিটার দূর থেকে উৎসব প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছে কুতুবদিয়া উপজেলার কবি জসিম উদ্দিন উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী তফসিরুল ইসলাম। তফসিরুল বলে, ‘ভোর পাঁচটায় উৎসবে যোগ দিতে বাড়ি থেকে বের হই। সাগর পাড়ি দিয়ে উৎসবে যোগ দিতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। লম্বা পথ কিংবা সাগর পাড়ি দেওয়ার দুঃখ-ক্লান্তি ভুলে গেছি। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।’
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম থেকে এসেছে হুমায়রা সোলতানা। সে উখিয়ার কুতুপালং উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছে। হুমায়রা সোলতানা বলে, ‘আমার স্কুল থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছি শুধু আমি। আজ সংবর্ধনায় এসে এত এত মেধাবীর সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরতে পেরে ভালো লাগছে।’
দিনব্যাপী সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে ক্রেস্ট, ডিজিটাল সার্টিফিকেট, শিখোর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষাবৃত্তি, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস, সানকুইকের ফ্রুট জুস, প্রথম আলো ই-পেপার (তিন মাস) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, প্রথমা ডটকমে অনলাইনে বই অর্ডারে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, প্রথমা প্রকাশনের বিক্রয়কেন্দ্রে প্রথমা প্রকাশনের ও প্র প্রকাশনের প্রকাশিত বইয়ে ৩০ শতাংশ ছাড়, কিশোর আলো ও বিজ্ঞানচিন্তার ৬ (ছয়) মাসের প্রিন্ট ভার্সনের সাবস্ক্রিপশনে বিশেষ ছাড়, কোনো প্রকার চার্জ ছাড়া ডেলিভারি ও একটি আকর্ষণীয় চাবির রিং বিনা মূল্যে।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে কথাসাহিত্যিক ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘তোমাদের যোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে হবে। বানরকে বিমান চালাতে দিলে যেমন সে পারবে না, তেমনি অযোগ্য লোক দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা মেধাবী। এই মেধাকে বিকশিত করতে হবে আরও বেশি বই পড়ার মাধ্যমে।’
এর আগে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন কক্সবাজার জেলা বন্ধুসভার সভাপতি উম্মে সাদিয়া হোসেন সিকদার।
শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দিতে উৎসব প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছেন বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক এম সিরাজুল ইসলাম, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব ও উত্তরণ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. সৈয়দ করিম, কক্সবাজার মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী, কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনুপম দাশ।
শিক্ষার্থীদের সাফল্যের আনন্দ উদ্যাপন করতে কক্সবাজারে সাংস্কৃতিক পর্বে স্থানীয় আয়োজনের পাশাপাশি গেয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ডি-রকস্টার শুভ।