কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা ও পৌরসভা যুবদলের বর্তমান কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে সংগঠনটির ১২ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। একই সঙ্গে তাঁরা চলমান কমিটি বাতিল করে তৃণমূল ও নির্যাতিত নেতা–কর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটির গঠনের দাবি জানান। বুধবার দুপুরে উপজেলা সদরে যুবদলের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা এ দাবি জানান।
পদত্যাগ করা নেতারা হলেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কলিম উল্লাহ, সেলিম জাহাঙ্গীর, কাজী জসিম উদ্দিন, আলাউদ্দিন আল মাহমুদ, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হাবিবুল হক, নেছার উদ্দিন ও শাহিন মজুমদার। অন্যদিকে পৌরসভা কমিটি থেকে পদত্যাগ করে যুগ্ম আহ্বায়ক নাছির উদ্দীন, সদস্য এয়াকুব আলী, মাহবুবুল আলম, মোবারক খান ও শাহাদাত হোসেন।
২০২৩ সালের ২২ মে মনিরুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও কামরুজ্জামানকে (টিটু) সদস্যসচিব করে উপজেলা যুবদলের ৫৬ সদস্যবিশিষ্ট এবং নুরুল আফসারকে আহ্বায়ক ও এনায়েত উল্লাহকে সদস্যসচিব করে পৌর যুবদলের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে জেলা যুবদল।
দুই কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার অনুসারী। অন্যদিকে পদত্যাগ করা ব্যক্তিরা কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূঁইয়ার অনুসারী। দীর্ঘদিন ধরে গফুর ভূঁইয়া ও মোবাশ্বের ভূঁইয়ার মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে। তাঁরা দুজনই কুমিল্লা-১০ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আজ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন সদ্য পদত্যাগ করা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কলিম উল্লাহ। তিনি উপজেলা যুবদল সাবেক সাধারণ সম্পাদক। কলিম উল্লাহ বলেন, ‘ত্যাগী ও কারা নির্যাতিত নেতা–কর্মীদের বাদ দিয়ে ও গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ২০২৩ সালের ২২ মে উপজেলা যুবদলের একটি পকেট কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর তাঁরা আজ পর্যন্ত কোনো ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বা কোনো এলাকায় যুবদলের কোনো অনুষ্ঠান করতে পারেনি। কয়েকটি ইউনিয়ন সম্মেলন ছাড়াই ঘরে বসে প্যাডসর্বস্ব কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাই আমরা এই কমিটি বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
পদত্যাগ করা অন্য নেতারা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করে ও মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা যাচাই করে ত্যাগী কর্মীদের দিয়ে উপজেলা যুবদলের কমিটি দেওয়ার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। সঠিক নেতৃত্ব না আসায় ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলছে নাঙ্গলকোট উপজেলা যুবদল। উপজেলা যুবদলকে সুসংগঠিত করতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তৃণমূল ও কারা নির্যাতিত নেতা–কর্মীদের নিয়ে কমিটির গঠন করতে হবে।’
জানতে চাইলে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কমিটি ঘোষণার দেড় বছর পর কেন পকেট কমিটি বলছেন তাঁরা? আর কমিটির অনুমোদন তো আমি দিইনি, অনুমোদন দিয়েছে জেলা কমিটি। এখন তাঁরা কী কমিটির অনুমোদন দিয়েছে, সেটা জেলার নেতারাই ভালো বলতে পারবেন।’ তিনি বলেন, বিগত সময়ে তাঁরা তাঁদের (পদত্যাগী) প্রতিটি কর্মসূচিতে থাকার জন্য বলেছেন। কিন্তু তাঁরা কেউই দলীয় কর্মসূচিতে আসেননি। নিজেরাই নিষ্ক্রিয় থেকে এখন মিথ্যাচার করছেন।
দক্ষিণ জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে ওই কমিটির ঘোষণা করা হয়। তাঁর জানামতে, তাঁরা সক্রিয়ভাবে মাঠে কাজ করেছেন। দেড় বছর পর কেন কমিটিকে পকেট কমিটি বলা হচ্ছে? তাঁদের কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জেলা যুবদলকে জানাতে পারে। তাহলে তাঁরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন। তাঁদের পদত্যাগ ও সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।