কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলাচলে অস্থায়ী সাঁকো

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জলাবদ্ধ হয়ে থাকায় অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

জলাবদ্ধ হাসপাতাল। সামনের পাকা সড়ক থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ফুট দীর্ঘ একটি অস্থায়ী সাঁকো। চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে হেঁটে হাসপাতালে চলাচল করছে। সাঁকো নির্মাণের পর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ওই হাসপাতাল হচ্ছে মৌলভীবাজারের ৫০ শয্যাবিশিষ্ট কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সাম্প্রতিক বন্যায় হাসপাতালটি তলিয়ে যায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন লোকজন। পানি না নামায় সেখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি’ একটি অস্থায়ী সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সাঁকোর নির্মাণকাজ চলে। ২০২২ সালের বন্যায়ও এ হাসপাতালে ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি এ উদ্যোগ নিয়েছিল।

সরেজমিনে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়, কুলাউড়া পৌর শহরের উত্তর বাজার এলাকায় মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে এ হাসপাতাল। মহাসড়ক থেকে হাসপাতালের জমি অনেক নিচু। এতে হাসপাতালের পুরো এলাকাই জলাবদ্ধ হয়ে আছে। সেখানে দেড় থেকে দুই ফুট পানি। ভেতরে দুটি ভবনে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া আরও সাতটি আবাসিক ভবন রয়েছে। হাসপাতালের সামনের মহাসড়ক থেকে হাসপাতালের বহির্বিভাগ ভবনের সিঁড়ি পর্যন্ত অস্থায়ী সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়েছে। প্লাস্টিকের ক্যারেট (মালামাল পরিবহনের ঝুড়ি) উপুড় করে এর ওপর লম্বা বাঁশ ফেলে তাতে কাঠের তক্তা বিছিয়ে সাঁকোটি তৈরি করা হয়েছে। এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ ফুট। রোগী, রোগীদের স্বজন, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্য মানুষ সাঁকোর ওপর দিয়ে হেঁটে চলাচল করছেন। কয়েক দিন ধরে পানি জমে থাকায় কালচে রং ধারণ করেছে। নোংরা পানিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার পানি কমলেও পুরোপুরি নেমে যায়নি। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এখনো দুই থেকে তিন ফুট পানিতে ডুবে আছে। এতে চলাচলে লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বুধবার দুপুরে

সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত ছয় মাস বয়সী ছেলেকে কোলে নিয়ে সাঁকো দিয়ে হেঁটে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর এলাকার বাসিন্দা শিল্পী বেগম। তিনি বলেন, ‘কলোনিতে ভাড়া থাকি। হেইখানে পাঁচ-ছয় দিন ধরি পানি। এইখানেও পানি। বাচ্চাটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেছে। তাই হাসপাতালে নিয়া আইছি। বিরিজটা (সাঁকো) অওয়ায় উপকারে লাগছে। নাইলে তো ভিজিয়া আইতাম।’

আবদুল হক নামের অসুস্থ এক বৃদ্ধকে হাতে ধরে সাঁকো পার করছিলেন তাঁর ছেলে নাইম আহমদ। তাঁদের বাড়ি ভূকশিমইল ইউনিয়নের মুক্তাজিপুর গ্রামে। নাইম বলেন, ‘গত শনিবারেও আব্বারে নিয়া ডাক্তারের কাছে আইছিলাম। ভ্যানে করি এই জায়গা পার করছি। আইতে-যাইতে ১০০ টাকা ভাড়া দিছি।’

সেখানে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান আখইয়ের দেখা মেলে। আতিকুর রহমান বললেন, ‘আসলে হাসপাতাল একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান। জরুরি কাজে এখানে আসা লাগে। অথচ সাত-আট দিন ধরে জায়গাটা ডুবে আছে। মানুষ অবর্ণনীয় কষ্ট পোহাচ্ছিল। এই কষ্ট লাঘবে আমরা অস্থায়ী সাঁকোটি নির্মাণ করে দিয়েছি। পানি যত দিন থাকবে, সাঁকোও থাকবে। পানি কমলে সরিয়ে নেব।’

মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়ক খেতে কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে অস্থায়ী সাঁকোতে চলাচল করছেন লোকজন। বুধবার সকালে

আতিকুর রহমান জানান, এবার সাঁকোটি নির্মাণে আবদুল কাইয়ুম ও ইকবাল হোসেন সুমন নামের স্থানীয় দুই ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। কাজে ২০-২৫ জন শ্রমিক লেগেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফেরদৌস আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মানুষ খুব কষ্ট করছিল। রোগীদের ভ্যান, রিকশায় করে আনা হচ্ছিল। ভেতরের ৯টি ভবনের নিচতলায় এত দিন পানি ছিল। আমরাও ভিজে চলাচল করি। ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগের কারণে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। তাঁদের এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।’

জলাবদ্ধতার কারণ সম্পর্কে ফেরদৌস আক্তার বলেন, সামনের সড়ক থেকে হাসপাতাল দেড়-দুই ফুট নিচুতে। ভারী বৃষ্টি হলেই এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা ঠেকাতে হাসপাতালের ভেতরের সড়ক ও ড্রেনগুলো উঁচু করার বিষয়ে গত বছর স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে তা ফেরত আসে। এবার আবারও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম পাঠান মুঠোফোনে বলেন, কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জলাবদ্ধতার নিরসনে সড়ক ও ড্রেন উঁচুকরণে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। অর্থ বরাদ্দ হলে কাজ করে দেওয়া হবে।