বানরগুলোকে খাবার দিচ্ছেন প্রাধিকারের সদস্যরা
বানরগুলোকে খাবার দিচ্ছেন প্রাধিকারের সদস্যরা

ভালোবেসে প্রাণীর জন্য কাজ করছে ‘প্রাধিকার’

আজ সংগঠনের সদস্যরা ‘পাখির জন্য ভালোবাসা’ কর্মসূচি পালন করবে। উঁচু গাছগুলোয় পাখির জন্য বাসা বানিয়ে দেওয়া হবে।

বন্য প্রাণী যেখানেই আটক হচ্ছে, সেখানে তাঁরা গিয়ে সেসব প্রাণীদের উদ্ধারের পাশাপাশি পরিপূর্ণ সুস্থ করে সিলেটের বিভিন্ন বনে অবমুক্ত করছেন। রাস্তায় থাকা কুকুর, বিড়ালসহ আহত প্রাণীদের নিয়মিত চিকিৎসা দেন। প্রতিবছর পথের কুকুর ও বিড়ালদের বিনা মূল্যে জলাতঙ্ক ও কৃমিনাশক টিকা দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময় পরপর পথের অভুক্ত প্রাণীদের মধ্যে খাবারও বিতরণ করা হয়। গত ১০ বছরে এক হাজারের বেশি প্রাণীকে চিকিৎসা দিয়েছেন তাঁরা। এই তাঁরা হলেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘প্রাধিকার’র সদস্যরা।

সংগঠনের সদস্যরা বলছেন, ‘প্রাণী বাঁচুক, বাঁচুক পৃথিবী’ স্লোগান নিয়ে তাঁরা বিপন্ন প্রাণীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন। কারণ, প্রাণীরা ভালো না থাকলে পরিবেশ ভালো থাকবে না। আর পরিবেশ ভালো না থাকলে মানুষ ভালো থাকবে না। মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশ মিলে একটি সুন্দর আগামীর পৃথিবী তৈরির জন্য প্রাধিকার কাজ করছে। ২০১২ সালের ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবসে প্রাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী এই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত।

এ ছাড়া, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাণীদের প্রতি মমতা ও ভালোবাসা তৈরি করতে খুদে শিক্ষার্থীদের সচেতন করেন। নিয়মিতভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, বিভিন্ন প্রাণী দিবস উদ্‌যাপনে সভা, সেমিনারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। ‘সেভ দ্য ফ্রগস’ নামেও তাঁরা প্রতিবছর গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে থাকেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিজ আহম্মেদ বলেন, গত জুন মাসে সিলেট অঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল, তখন ফসলি জমি ও গো-চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে মালিকেরা বিপাকে পড়েছিলেন। সংকট ঠেকাতে বিনা মূল্যে গো-খাদ্য বিতরণ করা হয়। বানরদের মধ্যে নিয়মিত খাবার বিতরণ করছেন প্রাধিকারের সদস্যরা। তাঁদের সংগঠন মূলত বিপন্ন প্রাণীদের কণ্ঠ হতে কাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রাধিকারের সদস্যরা বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও নিয়মিত উদ্‌যাপন করেন। ওই দিন তাঁরা ‘পাখির জন্য ভালোবাসা’ কর্মসূচির মাধ্যমে উঁচু গাছগুলোয় পাখির জন্য বাসা বানিয়ে দেন। বনভূমি ও গাছপালা উজাড়ের ফলে পাখির বাসস্থান হুমকির মুখে থাকায় তাঁরা মাটির কলসের ভেতরে খড়কুটো রেখে পাখির বাসা তৈরি করে তাঁরা সিলেটের বিভিন্ন গাছে ঝুলিয়ে রাখেন। আজ মঙ্গলবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেও একই কর্মসূচি পালিত হবে।

প্রাধিকারের কয়েকজন সদস্য বলেন, তিন সপ্তাহ আগে সিলেট নগরের জিন্দাবাজার এলাকা থেকে একটা আহত ভুবন চিলকে উদ্ধার করেন তাঁরা। এ চিলের বাম দিকের ডানাটা ভেঙে গিয়েছিল। ধীরে ধীরে পচনও ধরে যায় ডানায়। তাই ডানাটা কেটে ফেলতে হয়েছে। এখন সেবা ও চিকিৎসা দিয়ে ভুবন চিলটিকে সুস্থ করা হয়েছে। যেহেতু পাখিটির একটা ডানা নেই, তাই উড়তেও পারে না। এখনো চিলটিকে সংগঠনের সদস্যরা দেখভাল করছে।

সদস্যরা আরও জানান, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে আটক হওয়া গন্ধগোকুল, অজগর, মেছোবাঘ, ভুবন চিল, বাজপাখি, বনবিড়াল, তক্ষক, প্যাঁচা, ইগল, বানর, অজগর, পদ্মগোখরা, ঘরগিন্নি, দাঁড়াশসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী উদ্ধার করে সুস্থ করেছে প্রাধিকার। ২০২১ সালে প্রাধিকারের সদস্যরা উদ্ধার করা ২৭টি ডিম থেকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে গোখরা সাপের বাচ্চা ফুটিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করেন।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা বলেন, প্রাধিকারের সদস্যদের কর্মকাণ্ড সমাজের সবার জন্য অনুসরণীয়। পরিবেশ বাঁচাতে একটি সুশৃঙ্খল বাস্তুসংস্থান নিরাপদ রাখা জরুরি। প্রাণীর অধিকার রক্ষায় প্রাধিকারের সদস্যরা সারা বছর নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। প্রাণীর জন্য তাঁদের ভালোবাসা অতুলনীয়। এ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নিয়ে তাঁরা গর্ব অনুভব করেন।