জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্য প্রতীকের কোনো এজেন্ট কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ঢুকলে হাত ভেঙে যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা।
আর অপর এক নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, হানাহানির চেষ্টা করা হলে দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। যাদের দাঁত নেই, তাদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেওয়া হবে। দুই নেতার হুমকি দেওয়া এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ওই দুই নেতা হলেন সাইদুল হাসান ওরফে সাইদ ও খন্দকার মোতাহার হোসেন ওরফে জয়। সাইদুল হাসান সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক। তিনি পিংনা সুজাত আলী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। আর খন্দকার মোতাহার হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
এই দুই নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আনারস প্রতীকে অংশ নেওয়া ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলামের সমর্থক। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এই দুই নেতার হুমকি দেওয়া একটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গত মঙ্গলবার রাতে পিংনা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে একটি সভায় এসব কথা বলেছিলেন তাঁরা।
ভিডিওতে আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল হাসানকে বলতে শোনা যায়, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই। আমরা প্রথমেই পিংনা ইউনিয়ন থেকেই রফিক সাহেবকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেই ঘোষণাকে আমাদের সার্বিক শক্তি দিয়ে হলেও যেভাবেই হোক বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এমপি কাদের, উপজেলা চেয়ারম্যান কাদের, ভাইস চেয়ারম্যান কাদের, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কাদের—আমাদের। তাই সাবধান হয়ে যান। আমাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হানাহানি করার চেষ্টা করবেন না। যদি করেন, আমি স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, তাদের দাঁত ভেঙে দেওয়া হবে। যাঁদের দাঁত নাই, তাঁদের চাপার হাড্ডি ভেঙে দেওয়া হবে। সুতরাং সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। পিংনাতে আমরা উন্নয়ন করতেছি। এই উন্নয়নে যারা বাধা দিতে আসবে, তাদের আমরা প্রতিহত করব। আমাদের বিরুদ্ধে যারা কথা বলে, তাদের জবান আমরা বন্ধ করে দেব। আগামী ৮ মের নির্বাচনে অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট আমরা দিতে দেব না। আমরা রফিক সাহেবকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে আজকেই ঘোষণা দিলাম।’
একই ভিডিওতে সাইদুল হাসানের বক্তব্যের পর আরেক আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোতাহার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সাইদুল স্যার যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমরাও তাঁর ঘোষণার সঙ্গে একমত। অন্য কোনো মার্কার এজেন্ট কোনো কেন্দ্রে দিতে দেব না। এজেন্ট দিলে তার হাত বাড়ি দিয়ে ভেঙে আমরা যমুনা নদীতে নিক্ষেপ করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেটা ভাইরাল হওয়ার সেটা হয়েছে। দেখুন, পিংনা বাজার উন্নয়নে আমরা কাজ করতেছি। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল উন্নয়নকাজে বাধা সৃষ্টি করছে। যারা উন্নয়নকাজে বাধা সৃষ্টি করছে, আমি তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছি। এখানে নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো বক্তব্য দিইনি, দেওয়ার প্রয়োজনও নাই। কারণ, এখানে রফিক সাহেবের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নাই।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মোতাহার হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ শানিয়াজ্জামান তালুকদার প্রথম আলো বলেন, ওই বক্তব্যের বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গতকালই ওই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য কারণ দর্শানো হয়েছে।
এবার সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে পোগলদিঘা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামস উদ্দিন এবং জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ্ নানা নাটকীয়তার পর তাঁদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। শেষ পর্যন্ত রফিকুল ইসলাম (আনারস) ও তালেব উদ্দিন (দোয়াত–কলম) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামী ৮ মে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।